ঢালিউডের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণির দায়ের করা যৌন নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচজনকে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম ইউএনবিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত উত্তরা সেক্টর-১ থেকে পরীমণির মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নাসির উদ্দিন মাহমুদের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখা যাচ্ছে যে তিনি বর্তমানে কুঞ্জ ডেভেলপার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান, উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি, লায়ন ক্লাবের ঢাকা জোনের সাবেক চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ঢালিউডের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণি। সোমবার সাভার মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন: আমাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে: পরীমণি
এতে নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এর আগে সকালে রূপনগর থানার মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেন পরীমণি।
সোমবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশিচত করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম।
জানা যায়, গত ৯ জুন রাতে চিত্রনায়িকা পরীমণি রাতে সাভারের বিরুলিয়ার তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকা বোড ক্লাবে এক ব্যক্তির সাথে জান। সেসময় তাকে নেশা জাতীয় দ্রব্য খাইয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন নাসির ইউ মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি।
আরও পড়ুন:‘ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগের পর সাংবাদিকদের যা বললেন পরীমণি
রবিবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। তিনি দাবি করেছেন যে ছয় জন তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছিল।
ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর রবিবার রাত ১০টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখী হন।
সংবাদ সম্মেলনে এই নায়িকা জানান, তিনি জীবনের নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন। নিজ বাসায় তিনি নিজেকে নিরাপদ বোধ করছেন না।
আরও পড়ুন: ফোর্বসে এশিয়ার ১০০ ডিজিটাল তারকার তালিকায় পরীমনি
পরীমণি বলেন, ‘আমি সুইসাইড (আত্মহত্যা) করার মতো মেয়ে না। আজকে যদি আমি মরে যাই, সবাইকে জানাতে চাই, আমি সুইসাইড করবো না।’
এই অভিনেত্রী জানান, ‘ঢাকা বোট ক্লাবে’ তাকে হেনস্থা করা এক ব্যবসায়ী নিজেকে পুলিশের আইজিপি বেনজির আহমেদের বন্ধু হিসেবে পরিচয় দেন। ওই ব্যবসায়ীর নাম ‘নাসির উদ্দিন মামুন’ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।
ঘটনার পর ভোর রাতে বনানী থানায় অভিযোগ করতে গেলে তার অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান এই অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন:নাসির উদ্দিনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মামলা করলেন পরীমণি
তাকে জানানো হয়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) থানায় নেই। এই অভিনেত্রীর নাম্বার রেখে দিয়ে তাকে বলা হয়, ওসি আসলে তার সাথে যোগাযোগ করা হবে।
কিন্তু পরীমণির দাবি, তার সাথে থানা থেকে কোনও প্রকার যোগাযোগ করা হয়নি।
এদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম মিয়া জানান, তারা এই অভিনেত্রীর কোনও অভিযোগ এখনও পাননি।
পরিমণির স্ট্যাটাসটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমি পরীমণি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র।
আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার ? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! আমি কাউকে পাইনা মা। যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনা বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়! আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারিনা। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কি বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মত (যাদের অনেক নাম এক্ষুনি মনে পরে গেল) তাদের মত আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো।
আফসোস ছাড়া কারোর কি করবার থাকবে তখন! আমি তাদের মত চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোন অন্যায় মেনে নিতে! আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহুর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্যে দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্যে আপনাকে দরকার মা।
মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।