ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান মাহবুব পারভেজের মতে, বাংলাদেশে পর্যটন খাতে সীমাহীন সুযোগ রয়েছে।
ইউএনবি’র লাইট অ্যান্ড লেন্স শীর্ষক ভার্চুয়াল লাইভে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ৭৭৮টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে ৪৪৫টি ট্যুরিস্ট পুলিশের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে এক কোটি ৩৭ লাখ স্থানীয় পর্যটক এসব স্থানে ভ্রমণ করেছেন এবং ৪৬ লাখ পর্যটক ভ্রমণে গিয়েছেন।
‘হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি বলেন, বিশ্ব পর্যটন সংস্থা মনে করে চলমান মহামারির কারণে আগামী দুই বছরের মধ্যে এই ৪৬ লাখ পর্যটক বিদেশ ভ্রমণের যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এটিকে আমি একটি সুযোগ হিসেবে দেখছি, কারণ এই পর্যটকরা বিদেশে না গিয়ে এসময়টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করবেন।
আরও পড়ুন: ‘ট্যুর ফর সোশ্যাল গুডস’ পর্যটন খাতকে জাগিয়ে তুলবে: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
ইউএনবির ঊর্ধ্বতন নির্বাহী (ডিজিটাল) জাহিদ ইসলামের সঞ্চালনায় এ ভার্চুয়াল ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান, দ্য ওয়েস্টিন ও শেরাটন ঢাকার বিক্রয় ও বিপননের ক্লাস্টার ইনচার্জ আল-আমিন এবং নেসেন্ট গার্ডেনিয়ার হেড অব অপারেশন্স রেজাউল করিম যুক্ত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটন খাতের ব্যবসা সবসময়ই পর্যটক নির্ভর।
দ্য ওয়েস্টিন ও শেরাটন ঢাকার বিক্রয় ও বিপননের ক্লাস্টার ইনচার্জ আল-আমিন বলেন, ঢাকার পুরো হোটেল খাত কোভিডের প্রাদুর্ভাবের আগে ৬৫-৭০ শতাংশ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে তারা আর আসছেন না।
আরও পড়ুন: দেশের কোভিডের ক্ষত কাটাতে সাহায্য করতে পারে সমুদ্র পর্যটন, বলছেন বিশেষজ্ঞরা
তিনি বলেন, পর্যটন শিল্পের জন্য মহামারি থেকে যে শিক্ষা আমরা পেলাম, তা হলো আমাদের বিদেশি পর্যটকদের উপর অতি নির্ভরশীল থাতা কমাতে হবে এবং স্থানীয় পর্যটন ত্বরান্বিত করার দিকে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আমরা অনেক কঠিন সময় পার করছি, তবে সামনের মাসগুলোতে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে এবং আমাদের দেশিয় পর্যটকদের আপ্যায়নের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।
নেসেন্ট গার্ডেনিয়ার হেড অব অপারেশন্স রেজাউল করিম বলেন, আমাদের শিল্পে মহামারি ব্যাপক আকারে প্রভাব ফেলেছে, তবে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা অসম্ভব নয়। এরকম ঘটনা মোকাবিলা করে আমরা সবসময় আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছে। উদাহরণ হিসেবে আমরা হলি আর্টিসানের ঘটনার কথা বলতে পারি।
আরও পড়ুন: করোনার ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে কুমিল্লার পর্যটন শিল্প
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) আশঙ্কা বাংলাদেশ পর্যটন ও হসপিটালিটি খাতে প্রায় ৪৭০ বিলিয়ন টাকা লোকসানের পথে রয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা আশা স্থানীয়ভাবে পর্যটন নিয়ে যথাযথ পরিকল্পনা বাস্তবায়েত হলে আগামী ২৪ মাসে এই বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি পুশিয়ে নিতে সহায়ক হতে পারে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘ঢাকার বাইরে কক্সবাজার এবং সিলেটের হোটেলগুলো মহামারির সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। স্থানীয় পর্যটকদের জন্য পরিবেশবান্ধব পর্যটন নিশ্চিত করতে পারলে বিগত দিনের ক্ষতি অবশ্যই পুশিয়ে নিতে পারবো।’
আরও পড়ুন: সবাইকে নিয়েই দেশের পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাবে: প্রতিমন্ত্রী
বাংলাদেশ হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রচলিত পাঠ্যক্রমকে আরও বেশি বাস্তবসম্মত করার সময় এসেছে, যোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, হসপিটালিটি এমন একটি খাত যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রায়োগিক দক্ষতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি যে কোনো ট্যুরিজম গ্র্যাজুয়েটকেও চাকরিতে যোগদানের পরে নিজের কাজের ক্ষেত্র থেকে শিখতে হবে। তবে, স্থানীয় বাংলাদেশি অনেক কর্মকর্তাদের ইংরেজিতে দক্ষতা নেই।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের সেবা দিতে ইংরেজি ছাড়াও যারা পর্যটন খাতে আছেন তাদের তৃতীয় কোনো ভাষা শেখার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের পাঠ্যক্রমটি নতুন করে পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে পাঠ্যক্রমে ডিজিটাল বিপণন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং হসপিটালিটির উদ্যোক্তাকে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।’
আরও পড়ুন: 'হাওর ভিত্তিক পর্যটন' উন্নয়নে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে: পর্যটন প্রতিমন্ত্রী
তার সাথে একমত হয়ে মো. আল-আমিন বলেন, পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত পেশাদাররা এক্ষেত্রে একাডেমিশিয়ানদের সহায়তা করতে পারে। আগামী ১০-১৫ বছরে দেশে আরও অনেক আন্তর্জাতিক হোটেল হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে আমাদের তরুণের এ খাতে নিয়ে আসতে হবে এবং সে অনুযায়ী তাদেরকে তৈরি করতে হবে।’
রেজাউল করিম হোটেল এবং পর্যটন শিল্পের মেরুদণ্ড হিসেবে স্টুয়ার্ডের উপর জোর দেন। বিদেশের তুলনায় স্থানীয় শিক্ষার্থীরা স্টুয়ার্ড হিসেবে হোটেলগুলোতে যোগ দিতে চান না। আজকের খ্যাতিমান অনেক নামী হোটেল ম্যানেজার ছোট হোটেলগুলোতে স্টুয়ার্ড হিসেবে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। এজন্য মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া দরকার।’
সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব পারভেজ বলেন, বাংলাদেশে সামগ্রিক পর্যটন শিল্পের সাথে ১৩টি মন্ত্রণালয় যুক্ত এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে পর্যটন-বান্ধব দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এটা সারা দেশের পর্যটকদের জন্য আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা নিশ্চিত হবে।