হাত নেই, তাই বলে কি স্বপ্ন থেমে যাবে! স্বপ্ন তো হার মানার জন্য নয়। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় যে স্বপ্ন পূরণ করতে পারে তারই নজির তৈরি করেছেন কুড়িগ্রামের এক শিক্ষার্থী। পা দিয়ে লিখে স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এমন অদম্য মনোবল ও মেধার সাক্ষর রেখেছেন কুড়িগ্রামের শিক্ষার্থী মানিক রহমান। পা দিয়ে লিখে হাজী মুহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষার মেধা তালিকায় ১৯২তম স্থান অধিকার করেছেন তিনি। হাবিপ্রবির বি অনুষদে ভর্তি পরীক্ষায় তিনি এ সাফল্য অর্জন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
এর আগে, মানিক মাধ্যমিক সমাপনী পরীক্ষা (এসএসসি) ও উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনী পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
রবিবার (১১ মার্চ) দুপুরে হাবিপ্রবির বি অনুষদে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর মানিকের এ সাফল্যের তার মা-বাবা, আত্নীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীসহ অনেকেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
মানিক রহমান ২০২২ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২৪ সালে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
মানিক কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও সহকারী অধ্যাপক মরিয়ম বেগমের বড় সন্তান। শুধু এসএসসি- এইচএসসিতে নয় বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের আত্মবিশ্বাস ও মনোবলকে কাজে লাগিয়ে পিইসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি এবং জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে সকলের মুখ উজ্জ্বল করেছিল মানিক রহমান। এছাড়াও পা দিয়ে মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিংয়েও যথেষ্ট পারদর্শী সে। এ কারণেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের কারনে অবশেষে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণের দ্বার উন্মোচিত হলো মানিকের।
আরও পড়ুন: অবৈধ দখল-দূষণের কবলে ফেনীর ২৪৪ নদী ও খাল
মানিকের এমন সাফল্যে বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম জানান, আমাদের দুই ছেলের মধ্যে মানিক বড়। মানিক জন্ম থেকেই শারিরীক প্রতিবন্ধী। তার দুটি হাত নেই, একটি পা অন্যটার চেয়ে অনেকাংশে খাটো। কিন্তু প্রতিবন্ধী হলেও আমরা তাকে প্রতিবন্ধী মনে করি নি। হাত না থাকায় ছোট থেকেই আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। পা দিয়ে লিখলেও তার লেখা অনেক সুন্দর এবং পড়াশোনায় সে খুবই মনোযোগী। সকলের দোয়ায় আজ তার কম্পিউটার ইন্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নের দ্বার উন্মোচিত হলো। সকলে দোয়া করবেন সে যেন একজন দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে।
নিজের ব্যাপারে মানিক রহমান বলেন, আমার দুটি হাত না থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমত, বাবা মা ও শিক্ষকদের দোয়া ও অনুপ্রেরণায় আমি পিইসি থেকে এইচএসসি পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। এবছর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে মেধা তালিকায় ১৯২ তম স্থান অধিকার করেছি। সকলেই দোয়া করবেন আমি যেন একজন দক্ষ কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারি।