বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পুষ্টিকে গুরুত্ব দিয়ে নীতি ও কর্মসূচিতে ভারসাম্য তৈরি করা এখন একটি অগ্রাধিকার, কারণ শহরাঞ্চলে পুষ্টি সেবার মান গ্রামাঞ্চলের তুলনায় অনেক কম।
মঙ্গলবার দুপুরে নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহায়তায় ডিনেট প্রাঙ্গণে আয়োজিত ‘ক্রমাগত নগরায়নের ফলে সৃষ্ট পুষ্টি স্থানান্তর, এর চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধানগুলো সম্পর্কে যথাযথ পুষ্টিসেবা অন্তর্ভুক্তিকরণ’- শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ কথা বলেন। আলোচনায় সরকারি, বেসরকারি, অংশীদার উন্নয়ন সংস্থা ও নীতিনির্ধারক মহলের পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার বৈঠকের সঞ্চালনা করেন এবং নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ মূল বক্তব্য প্রদান করেন।
এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিনেটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক এম শাহাদাত হোসেন এবং উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন গেইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর রুদাবা খন্দকার।
ডিনেট-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক এম. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে ২০৫০ সাল নাগাদ এশিয়া ও আফ্রিকার ২ দশমিক ৫ বিলিয়নেরও বেশি লোক শহরে বসবাস করবে। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ দ্রুত নগরায়ন এবং পুষ্টি সম্পর্কিত বাধাঁর সম্মুখীন হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমাদেরকে অবশ্যই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, নগরায়ন ও পুষ্টিমানের প্রগতিশীলতা নির্ধারণ করতে হবে। আজকের আলোচনা আশা করি নগরায়নের ফলে পুষ্টিগত বাধার যে সমস্যা সেটা সমাধানের সঠিক সমাধান দেখাবে।’
ড. সাইকা সিরাজ বলেছেন, ‘বছরের পর বছর ধরে অপুষ্টি হ্রাস পেয়েছে কিন্তু একই সঙ্গে অতিরিক্ত পুষ্টি বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সমাজের অপুষ্টির মাত্রা পরিবর্তন হয়নি, বিশেষত শহরাঞ্চলে।’
আরও পড়ুন: রাজধানীতে পুষ্টিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন
বিশ্ব ব্যাংকের কনসালটেন্ট ড. এস. এম. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গ্রামীণ পর্যায়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষদের স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে যাতে তারা শহরকেন্দ্রিক চাকরির সন্ধানে এসে ভিড় না করে।’
হেলেন কিলার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন প্রধান ড. আফসানা হাবিব শিউলী বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে ছাদকৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তারা যখন নিজ হাতে খাদ্য উৎপাদনে কাজ করবে, সুষম খাদ্যগ্রহণে এমনিতেই তারা আগ্রহী হয়ে উঠবে।’
ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিসের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মুরাদ মো. শমসের তাবরিস খান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে পুষ্টি রূপান্তরের ওপর দ্রুত নগরায়নের প্রভাব সম্পর্কে সরকারের অংশীজনদের সংবেদনশীল করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তার মতে, এই সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হলো সমাজে পুষ্টির চাহিদা তৈরি করা।
বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রওশন আরা বেগম বলেন, সরকারি ও বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্রমবর্ধমান উৎপাদনে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্প লাভের জন্যও অধিকাংশ খাবারে ভেজাল মেশায়।
পুষ্টি ও খাদ্য ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. নাজমা শাহীন বলেন, শহুরে লোকেরা প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণে এখন বেশি আগ্রহী। একটা গবেষণায় দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাত কোনো খাবারই স্বাস্থ্যকর নয়। তাই পুষ্টি বাস্তবায়নে খাদ্যনিরাপত্তার কোনো বিকল্প নেই।
বৈঠকটিতে আরও উপস্থিত ছিলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল নিউট্রিশন কাউন্সিলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ড. নুসরাত জাহান, ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিসেসের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. এস এম হাসান মাহমুদ, কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক ড. ইখতিয়ার উদ্দিন, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ-এর (আইসিডিডিআরবি) গবেষক ড. সাবরিনা রশিদ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নিউট্রিশন অফিসার সামিউল নেওয়াজ এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন থেকে মো. মিজানুর রহমান।
আরও পড়ুন: সিরাজগঞ্জে চাষ হচ্ছে ওষুধি ও পুষ্টিগুণের বিদেশি ফসল চিয়া সিড