পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র পুরোপুরি নির্মূল করা দীর্ঘমেয়াদি দায়বদ্ধতা। জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকীতে, আসুন আমরা পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।’
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ দিবস উপলক্ষে শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন সংস্থাসহ সবার কার্যকর অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গণসচেতনতা এবং বিশ্বব্যাপী প্রচারণা ত্বরান্বিত করা দরকার।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করে বলেন, বাংলাদেশ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের লক্ষ্যকে অবিচলভাবে সমর্থন করে।
পারমাণবিক অস্ত্র নিজেই একটি সমস্যা উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছিলেন, ‘এ ভুল অস্ত্রগুলো পরিচালনা করার জন্য সঠিক কোনো পন্থা নেই।’
দ্বিতীয়ত, তিনি বলেন যে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ করার জন্য এবং ভুল মানুষ বা সন্ত্রাসীদের হাতে পরমাণু অস্ত্র যাওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্তি পেতে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর অনুমোদনের মাধ্যমে বিশ্বের সব স্থানে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা দরকার, তাদের অবশ্যই এ ধরনের অঞ্চল স্থাপনকারী সব চুক্তির সাথে সম্পর্কিত প্রোটোকলকে অনুমোদন করতে হবে।
চতুর্থ দফায় তিনি বলেন, বৈষম্য ছাড়াই পারমাণবিক শক্তির গবেষণা, উৎপাদন ও এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য মানবজাতির সুবিধার্থে এবং রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অধিকারগুলোর জন্য পারমাণবিক প্রযুক্তির সম্ভাবনাগুলো কার্যকর আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছাই থেকেই জাতিসংঘ সৃষ্টি হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে সৃষ্ট ধ্বংসাত্মক ঘটনা ও মানবিক দুর্দশা বিশ্ব এবং মানবজাতির সম্মিলিত বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। জাতিসংঘ তার প্রথম রেজুলেশনে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব কল্পনা করেছিল।
ড. মোমেন বলেন, ‘৭৫ বছর কেটে গেছে কিন্তু আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম এখনও পারমাণবিক বিপর্যয়ের হুমকির মধ্যে বাস করছে।’
তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ যে মানবজাতিকে বাঁচাতে ব্যর্থ সেই দীর্ঘ-প্রতিষ্ঠিত সত্যকে আরও স্পষ্ট করে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে কোভিড-১৯ মহামারি।’
পারমাণবিক অস্ত্রে বিনিয়োগ শান্তি ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারে না উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমেই আমরা শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) তার ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন ড. মোমেন।
সভায় ইউএনজিএ’র সভাপতি ভোলকান বোজকিরসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।