এগুলো হলো কার্যকরভাবে দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা এবং এর মাধ্যমে তাদের সহায়তা প্রদানের ধরন ও সময়ের ব্যপ্তি নির্ধারণ করা। যেসব শিল্পকল-কারখানা এবং গরিব মানুষের সহায়তা প্রয়োজন তাদের কাছে তা সঠিকভাবে পৌঁছানো নিশ্চিত করা। এবং একটি ‘পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া’ চালু করা, যার মাধমে এ সহায়তা প্রদান কার্যক্রমের কার্যকারিতা, সচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটির একদল গবেষক বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর করোনাভাইরাসজনিত অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করেছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
সানেমের গবেষকরা বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২০.৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। এ হিসাবে দেশে এখন তিন কোটি চল্লিশ লাখ মানুষ দারিদ্র পীড়িত।
সানেমের হিসাব অনুসারে, যদি দারিদ্র্যের আয়সীমাকে মাত্র সোয়া এক গুণ বাড়ানো হয়, তাহলে আরও তিন কোটি ষাট লক্ষ মানুষকে পাওয়া যাবে যারা সরকারি হিসেবে দরিদ্র নয়, তবে তাদের অর্থনৈতিকভাবে ‘অসহায়’ জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
বিবিএসের সর্বশেষ আয় ও ব্যয় নির্ধারণ জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে দেখা যায়, যেকোনো রকম দুর্যোগে আয়ের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব পড়লে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ৪০.৯ শতাংশে পৌঁছাবে। যার অর্থ নতুন করে আরও ২০.৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র হবে।
যেকোনো ধরনের বিপর্যয়ে এ ‘অসহায়’ জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে দরিদ্র হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আয়ের ক্ষেত্রে এ ধরনের আকস্মিক নেতিবাচক প্রভাব অর্থনৈতিক কাজের ধরন অনুসারে ভিন্ন হতে পারে।
অর্থনৈতিক মডেলের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে নতুন যেসব মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে আসতে পারে তাদের একটি বড় অংশ নির্দিষ্ট কিছু কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত আছেন, যেমন ফসল উৎপাদন, গবাদিপশু লালন-পালন ও মাছ উৎপাদন (৪৩ শতাংশ), তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্প খাত (১৬ শতাংশ), খুচরা ব্যবসা (১১ শতাংশ), যোগাযোগ ব্যবস্থা (১০ শতাংশ) এবং নির্মাণ খাত (৭ শতাংশ)। এ লোকদের বেশিরভাগই অনানুষ্ঠানিক কর্মে নিযুক্ত (৮৫ শতাংশ নিযুক্ত)।
কর্মসংস্থানের যেকোনো ধাক্কা দেশের সার্বিক পর্যায়ে দারিদ্র্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ভৌগলিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের দুর্যোগের প্রভাব অঞ্চলভেদে ভিন্ন হবে। যদিও দুর্যোগের কারণে জাতীয়ভাবে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪০.৯ শতাংশ হতে পারে, তবে ৪০ জেলায় দারিদ্র্যের এ হার জাতীয় হারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ রাঙামাটিতে আরও ৩০.৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে আসতে পারে।
একইভাবে অন্য যে জেলাগুলোতে দারিদ্র্যের হার বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (যেসব জেলায় নতুন করে ২০.৪ শতাংশের বেশি মানুষ দারিদ্র্য হতে পারে) সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলা যেমন ময়মনসিংহে ৩০.২ শতাংশ, সুনামগঞ্জে ২৮.৭ শতাংশ, কক্সবাজারে ২৭.৫ শতাংশ, নীলফামারীতে ২৭.২ শতাংশ, নড়াইলে ২৭.২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৬.৯ শতাংশ, নেত্রকোনায় ২৫.৯ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ২৫.৮ শতাংশ, শেরপুরে ২৫.৬ শতাংশ, বরগুনায় ২৫.৫ শতাংশ এবং শরীয়তপুরে ২৫.৩ শতাংশ মানুষ এ দুর্যোগে নতুনভাবে দরিদ্র হতে পারে।
উল্লিখিত জেলাগুলোর বিপরীতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং নরসিংদী জেলায় এ দুর্যোগের অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব অপেক্ষাকৃত কম হতে পারে বলে গবেষণায় জানানো হয়।