শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে আর্থিক লেনেদেনের বড় অভিযোগ আসছে। আগে শিক্ষাভবনে এমপিওভুক্তি দেওয়া হলেও এখন তা মাউশির নয়টি অঞ্চলে দেওয়া হচ্ছে। এমপিওভুক্তিতে দুর্নীতি ও অর্থ লেনদেন এড়াতে প্রয়োজনে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ—এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ ও এমপিভুক্তি একসঙ্গে সম্পন্ন করা হবে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষা বিটের সাংবাদিকদের একমাত্র নিবন্ধিত সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইরাব) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান।
আরও পড়ুন: যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ ও সরবরাহ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার: শিক্ষা উপদেষ্টা
সভায় ইরাবের সভাপতি ফারুক হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান সালমান, ইরাবের সাবেক সভাপতি সাব্বির নেওয়াজ, নিজামুল হক, শরীফুল আলম সুমনসহ সংগঠনটির নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষা নিয়ে কোনো সংষ্কার কমিশন গঠনের পরিকল্পনা এ মুহুর্তে সরকারের নেই। এই খাত এখন চরম বিশৃংখলা অবস্থায় আছে। আগে শিক্ষাখাতে সব বিশৃংখলা দুর করে দুর্নীতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এরপর শিক্ষাখাতের বরেণ্যদের নিয়ে একটি ‘শিক্ষাখাতের উপদেষ্টা পরিষদ’ গঠন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
গুচ্ছে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিনবার চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিতে কত টাকা ব্যয় হতো, গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তারা কত টাকা আয় করছেন—এই দুটি বিষয়ের হিসাব নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে এই হিসাব নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের দুর্নীতি একদিনে সমাধান করা সম্ভব না। আমি মন্ত্রণালয়ে একবার বলেছি—সেটাকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চাই। সেটি মন্ত্রণালয়ের সবাই শুনেছে। কিন্তু শিক্ষার অধিদপ্তরগুলোতে যাইনি। সেখানে গিয়ে প্রথমে সর্তক করা হবে। তারপর দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে একটি উদাহরণ তৈরি করা হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা প্রথম খারাপ হয় ১৯৭২ সালে। বঙ্গবন্ধুর সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ আলী। তার একটা প্রচণ্ড ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। সেটা হলো— ভালো যে কলেজগুলো ছিল, নামকরা কলেজ যাকে বলে— বিএম কলেজ, ঢাকা কলেজ, মুরারীচাঁদ কলেজ, রাজশাহী কলেজ—প্রথমে এগুলোকে ইউনিভার্সিটি কলেজ বানিয়ে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, এরপর পলিটিক্যালি সব কলেজগুলোকে জাতীয়করণ করা হলো। জাতীয়করণ না করলেও ব্যক্তি উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে কলেজ গড়ে তোলা হলো, অনুমোদন নেওয়া হলো। এভাবে গড়ে উঠলো আজকের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি বেকার।
আরও পড়ুন: নতুন সব বই শিক্ষার্থীরা কবে পাবে, জানেন না শিক্ষা উপদেষ্টা
পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় জোর দিলেও বাংলাদেশে কেবল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়িয়ে বেকার তৈরি করা হচ্ছে উল্লেখ করে অর্থনীতির এই শিক্ষক বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেকনিক্যাল শিক্ষা গ্রহণ করে। আর আমাদের এখানে উল্টো। সবাই অনার্স-মাস্টার্স পড়ে বেকার হচ্ছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো তো আছেই, পাশাপাশি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি অন্যায্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা প্রাথমিকের সমমান। অথচ প্রাথমিকে জাতীয়করণ করা হয়েছে কিন্তু ইবতেদায়ীকে বাইরে রাখা হয়েছে। তাদের সমস্যাটা জেনুইন, কিন্তু এই মুহূর্তে অনশন করে আমাদের বিব্রত করা ছাড়া আর কিছুই হবে না। এটি না করে বরং কি করে কী করা যায়, সেই চিন্তা করতে আমাদের সময় দেন। অগ্রাধিকার অনুযায়ী আমরা যাতে কাজ শুরু করে দিতে পারি। আমরা শুরু করে দিতে চাই যাতে পরবর্তী সরকার এসে বুঝে যে এরা আসলেই বঞ্চিত, এদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন।