বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের বেজগ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। বর্তমানে তার পরিবার বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার কসবা গ্রামে বসবাস করে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, হাবিবুর রহমান রড সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে তিনি বাড়ি থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বের হন ব্যবসায়িক কাজে। এরপর আর বাড়িতে ফেরেননি তিনি। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজার পরও তার সন্ধান পায়নি। তার চার ছেলের মধ্যে দুজন থাকেন লন্ডনে। ফেসবুকে এক ভিডিওর মাধ্যমে ১৭ জানুয়ারি বিকালে হাবিবুর রহমানকে ফিরে পান সন্তানরা।
প্রায় ২৫ বছর ধরে হাবিবুর রহমান মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজার এলাকায় বসবাস করতেন। মানসিকভাবে তিনি অনেকটা ভারসাম্যহীন ছিলেন। গত ১২ বছর ধরে শাহাবুদ্দিন মাজারের পাশের রায়েশ্রী গ্রামের রাজিয়া বেগম (৫০) নামে এক নারী হাবিবুর রহমানকে দেখাশোনা করতেন।
রাজিয়া জানান, ২২ দিন আগে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের হাত ভেঙে যায়। প্রথমে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি। সেখানে কথা প্রসঙ্গে পাশের শয্যার রোগীর স্বজনদের হাবিবুর রহমানের কাহিনী জানান রাজিয়া। ওই স্বজনদের বাড়িও বিয়ানীবাজার উপজেলায়। তারা হাবিবুর রহমানের একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন এবং তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেয়া হাবিবুর রহমানের ছবি এবং জীবনের অনেক গল্পের মিল দেখে আমেরিকা থেকে বিয়ানীবাজারের এক ব্যক্তি ওই ভিডিও হাবিবুর রহমানের পরিবারের কাছে পাঠান ১৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার রাতে। ছবি এবং ভিডিওর মিল দেখে তার ছেলেরা শুক্রবার দিনে চলে আসেন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। দুই ছেলে শাহাব উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন কথাবার্তা বলে চিনতে পারেন তাদের হারানো বাবাকে। হাবিবুর রহমানও তখন নিজের বাড়ির ঠিকানা বলেন।
বাবাকে পেয়ে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। তারা ওসমানী হাসপাতাল থেকে বাবাকে নিয়ে আসেন নগরীর আল হারামাইন হাসপাতালে। সাথে বাবাকে দেখাশোনা করা রাজিয়া বেগমকেও নিয়ে আসেন। তাকেও হাবিবুর রহমানের সন্তানরা চিকিৎসা করাচ্ছেন।
হাবিবুর রহমানের নাতি কেফায়েত হোসেন বলেন, ‘দাদাকে পেয়ে অনেক খুশি। ছোটবেলা থেকে বাবা চাচাদের কাছে দাদার অনেক গল্প শুনছি। মনে আশা ছিল দাদাকে একদিন ফিরে পাবে। আজ আমাদের সবার আশা পূরণ হয়েছে।’