শুক্রবার ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন এ তথ্য জানান।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতির ৪৮তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দুদেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তা বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নিঃসন্দেহে আরও অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে। আমরা আশাবাদী যে আগামীতে আমাদের এ সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে নিবিড়তর হবে।
তিনি আশা করেন, বন্ধুপ্রতীম ভারত এমন কিছু করবে না যাতে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরস্পর বন্ধুত্বের মাধ্যমেই বাংলাদেশ ভারত এগিয়ে যাবে, উভয় দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৬ ডিসেম্বর দিনটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সরকার ও ভারতীয় জনগণের বহুমাত্রিক অবদানের বিস্তারিত আলোচনা ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমরা দুই বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে একই সঙ্গে রক্ত ঝরিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে তা তুলনাহীন। এছাড়াও, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গঠনে ভারত সরকারের অপরিসীম অবদান কখনোই ভোলার নয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ১৭,০০০ সদস্য শহীদ হয়েছেন এবং আরও অনেকে আহত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় অনেক সেনা পরিবারের সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে সম্মাননা দিয়েছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ৩৮০ জন শহীদ ভারতীয় সেনা সদস্যের জন্য সম্মাননা স্মারক প্রস্তুত করেছে, যা শিগগিরই ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ড. আবদুল মোমেন বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শুরু থেকেই উভয় দেশ অভিন্ন ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্কের শক্তিশালী বীজ বপন করেন।
তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় এ দু’দেশের বন্ধুত্ব, পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও বোঝাপড়া বর্তমানে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ়তর। বিগত এক দশকে আমাদের উভয় দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছে; যাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘সোনালী অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এ বছরের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি সফর করেন ও ২২ নভেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গোলাপী বলে অনুষ্ঠিত প্রথম দিবারাত্রি ক্রিকেট ম্যাচের উদ্বোধন করেন জনিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী বছর একই দিনে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব উদযাপনের লক্ষ্যে আমরা আবারো একত্রিত হবো।