তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ ভবন ভাঙার জন্য প্রয়োজনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে আনা হবে। তবে তার আগে দেশি প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’
বুধবার সচিবালয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলে অবস্থিত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র বহুল আলোচিত ভবন ভাঙার বিষয়ে সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘ভবনটি ভাঙতে গিয়ে যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য যা করার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। আমরা আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে এ জাতীয় ভবন ভাঙার ক্ষেত্রে যারা এক্সপার্ট তাদের কোটেশন দিতে অনুরোধ করেছি। এসময়ের মধ্যে ভবনটি ভাঙার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়া না গেলে আমরা নিজেরাই রাজউকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলবো।’
তিনি জানান, এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও আশপাশের পরিবেশ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেয়া হবে। কিন্তু ইমারতটি ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে সার্বিক নিয়ন্ত্রণে বিদেশি অন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজন হবে না।
ভবনটি ভেঙে ফেলতে কত সময় লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পুরো ভবন ভেঙে সেখান থেকে সব উপকরণ সরিয়ে ফেলতে তিন মাসের বেশি সময় নেয়া হবে না। আমরা আগামী ২৪ তারিখের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেব কোন প্রতিষ্ঠানকে এ দায়িত্ব দেব। এরপর সাত দিনের মধ্যে কাজের আদেশ দেয়া হবে।
প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ভবনটি ভাঙার জন্য কী ধরনের পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন তা তৈরি এবং ভবনটি গুড়িয়ে দেয়ার পরে যাতে আশপাশে কেউ দুর্ঘটনার মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিদ্যুতের লাইন অনেক দূর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কোনোভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিজিএমইএ ভবন ভাঙা হবে না। হতাহতের ঘটনা ঘটে এমন কোনো পদ্ধতি কোনোভাবেই প্রয়োগ করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে এমন সব কৌশল নির্ধারণ করা হবে যাতে ভবনটি ভাঙতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। পুরো ভবনটি স্তুপ আকারে ভবনের নির্ধারিত জায়গায় বসে পড়বে। সেদিন আপনারা (মিডিয়া) দেখতে পারবেন বাংলাদেশ প্রযুক্তিতে কতদূর এগিয়ে গিয়েছে, যার অনেক কিছুই কল্পনা করা যায় না।
ডিনামাইট দিয়ে ভবনটি ভাঙা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করিম বলেন, ডিনামাইট প্রচলিত শব্দে একটি বোমার মতো। আসলে এটা একটি পদ্ধতি, যার বাহ্যিক দৃশ্যটা ডিনামাইট আকারে দেখা যায়। এটি একটি নির্মাণ প্রযুক্তি ভেঙে ফেলার কৌশল মাত্র। কিন্তু কোনোভাবেই একটি ডিনামাইট বোমা মেরে ভবনটি ভাঙা হবে না।
তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের আলোকেই আমরা সেটাকে ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করেছি।
‘আমরা চাই রাষ্ট্রের চমৎকার একটি স্থাপনার মাঝখানে বেআইনি এ জাতীয় একটি ভবন যাতে টিকে না যায়। এটা ভেঙে দিয়ে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে যেখানেই বেআইনি ইমারত নির্মাণ করবে সেসব ভবন আমরা ভেঙে ফেলবো,’ যোগ করেন মন্ত্রী।
এর আগে ২০১১ সালে বিজিএমইএ’র ১৬ তলা বিশিষ্ট এ ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। পরে ভবন ভাঙতে আরও এক বছর সময় দেয় আদালত। ওই সময় গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়।