প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ লাইন অব ক্রেডিট-এলওসি’র আওতায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রথম চুক্তি সই করেছে। ভারত দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করতে এটিকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ বলে মনে করছে।
মঙ্গলবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেছেন , আমি মনে করি এই সপ্তাহের শুরুতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহায়তার (এলওসি) অধীনে প্রথম চুক্তি সই হয়েছে। আমি নিশ্চিত আপনারা নিবিড়ভাবে দেখেছেন, ‘সামান্য পরিমাণ’ হলেও এটি একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ’ ছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটি একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহায়তা-এলওসি হতে পারে। তবে এটি উন্নয়ন অংশীদারিত্ব কাঠামোরও একটি অংশ।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রচেষ্টা হল এটি প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে আরও সম্পৃক্ততার পথ খুলে দেবে এবং আমাদের সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কের বন্ধনকে ‘নিবিড়করণে’ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
উভয় নেতা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর যৌথ বিবৃতিতে বলেন, তারা এলওসি’র অধীনে প্রকল্পগুলোর দ্রুত চূড়ান্তকরণে সম্মত হয়েছে, যা দু’দেশের জন্য লাভজনক হবে।
ভারত এই বিষয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর যানবাহন ‘প্রাথমিক ক্রয় পরিকল্পনা’ চূড়ান্ত করাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য আগ্রহী।
বৃহত্তর সামুদ্রিক নিরাপত্তার জন্য একটি উপকূলীয় রাডার ব্যবস্থা প্রদানের ২০১৯ সালের সমঝোতা স্মারকটি তাড়াতাড়ি বাস্তবায়নে তাদের অনুরোধ পূনর্ব্যক্ত করেছে ভারত।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বে ট্রানজিট ফ্রি রপ্তানির প্রস্তাব ভারতের
আগস্টে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বাংলাদেশ-ভারত বার্ষিক প্রতিরক্ষা সংলাপে, ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলোর জন্য সহযোগিতা সহায়তার(এলওসি) ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাস্তবায়নে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় উভয় পক্ষ।
সংলাপে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সম্পৃক্ততা বাড়াতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এবং দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উদ্যোগের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান এবং ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব অজয় কুমার এই সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন।
প্রতিরক্ষা শিল্প এবং সক্ষমতা-নির্মাণ সহযোগিতার বিভিন্ন দিক বিস্তারিত আলোচনায় উঠে এসেছে।
উভয় দেশ প্রতিরক্ষা বাণিজ্য, সহ-উন্নয়ন এবং যৌথ উৎপাদনে সহযোগিতার সম্ভাবনায় সম্মত হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা দ্য হিন্দু জানিয়েছে যে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সম্প্রতি সামরিক প্ল্যাটফর্ম এবং সিস্টেমগুলো ভারত থেকে সংগ্রহ করতে একটি চাহিদাপত্র দিয়েছে। সরকারি সূত্র বলছে, ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সামরিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সহায়তার (এলওসি) ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ার কিছু অগ্রগতি চিহ্নিত করে।
এতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য ভাসমান ডক, লজিস্টিক জাহাজ এবং তেলের ট্যাঙ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকেএক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য হিন্দু জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত তিনটি আইটেম ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে। এলওসি-এর আওতায় প্রায় ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে পাঁচটি ব্রিজ লেয়ার ট্যাঙ্ক (বিএলটি-৭২); প্রায় ২ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সাতটি বহনযোগ্য ইস্পাত সেতু এবং টাটা গ্রুপ থেকে ২ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে ১১টি মাইন প্রোটেক্টিভ ভেহিকেল।
আরও পড়ুন: সেপা চুক্তির জন্য চলতি বছরেই আলোচনা শুরুর নির্দেশ হাসিনা-মোদির
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ক্রয় প্রস্তাবনার অন্যান্য সরঞ্জামগুলো হলো- মাহিন্দ্রা এক্সইউভি৫০০ অব-রোড যানবাহন; আনুমানিক ২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে মাহিন্দ্রা থেকে হার্ড টপ যান, ভারী উদ্ধারযান, সাঁজোয়া প্রকৌশলী উদ্ধারযান এবং বুলেটপ্রুফ হেলমেট।
সূত্রটি জানিয়েছে, বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি লজিস্টিক জাহাজ, ভাসমান ডক, তেল ট্যাংকার এবং একটি সমুদ্রগামী টাগ সংগ্রহের প্রস্তাব দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রানজিট চুক্তি: ভারতের পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘এমভি ট্রান্স সামুদেরা’