ভারতের নির্দিস্ট স্থল, বিমান ও নৌবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশকে তৃতীয় বিশ্বে পণ্য রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।
এজন্য বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের তাদের পণ্য পরিবহনের জন্য ভারতীয় বন্দরের অবকাঠামো পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে নয়াদিল্লির হায়দারাবাদে নরেন্দ্র মুদির সঙ্গে প্রতিনিধি পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকালে ভারতীয় পক্ষ এই প্রস্তাব দেন।
বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ফ্রি ট্রানজিট সুবিধা দিবে ভারত।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন করে উদ্বোধন করা হলদিবাড়ি রুট দিয়ে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ভারতীয় পক্ষ কার্যক্ষমতা ও সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে অনুরোধটি বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।
আরও পড়ুন: সেপা চুক্তির জন্য চলতি বছরেই আলোচনা শুরুর নির্দেশ হাসিনা-মোদির
এটি করতে আন্তসীমান্ত রেল সংযোগ কার্যকর করতে ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশকে চিলাহাটি হলটিবাড়ি বন্দর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ করে।
দুই নেতা বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল চুক্তির দ্রুত কার্যকরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় এবং উপ-আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।
ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়কসহ নতুন উপ-আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প শুরু করতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। এবং এই বিষয়ে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে।
একইভাবে, বাংলাদেশ ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের চলমান উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক এবং উপ-আঞ্চলিক রেল, সড়ক এবং অন্যান্য সংযোগ উদ্যোগ বাস্তবায়নের গুরুত্বারোপ করেন।
চলমান দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ টঙ্গী-আখাউড়া লাইনের ডুয়েল-গেজে রূপান্তর, রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নত পরিষেবার জন্য আইটি সমাধান ভাগাভাগি করাকে উভয় পক্ষই স্বাগত জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ট্রানজিট চুক্তি: ভারতের পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘এমভি ট্রান্স সামুদেরা’
এছাড়া সিরাজগঞ্জে একটি কন্টেইনার ডিপো নির্মাণ সহ কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নতুন গীতালদহ সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন, বেনাপোল-যশোর লাইন বরাবর ট্র্যাক এবং সিগন্যালিং সিস্টেম এবং রেলওয়ে স্টেশনগুলির উন্নীতকরণ, বুড়িমারী ও চ্যাংরাবান্ধার মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপনের মতো নতুন উদ্যোগকে উভয় পক্ষই স্বাগত জানিয়েছে।
এবং উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতার অধীনে বিভিন্ন আর্থিক উপকরণের মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন অন্বেষণ করতে সম্মত হয়েছে।
২০টি ব্রড-গেজ ডিজেল লোকোমোটিভ অনুমোদনে ভারতের ইঙ্গিতকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।
দুই নেতা চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর (এসিএমপি) ব্যবহারের চুক্তির অধীনে ট্রায়াল রানের সফল সমাপ্তিকে স্বাগত জানান এবং শিগগির এটি সম্পূর্ণরূপে চালুর অপেক্ষায়।
ভারতীয় পক্ষ তৃতীয় দেশের এক্সিম কার্গো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ২০১৫ সালের দ্বিপক্ষীয় উপকূলীয় শিপিং চুক্তি সম্প্রসারণ কাজের জন্য তার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছে।
উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে সরাসরি শিপিং কার্যক্রম চালু করতে সম্মত হয়েছে।
তারা অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন ও বাণিজ্য (পিআইডব্লিউটিটি) রুটে ৫ ও ৬ (ধুলিয়ান থেকে রাজশাহী-আরিচা পর্যন্ত সম্প্রসারণ) এবং ৯ ও ১০ (দাউদকান্দি থেকে সোনামুড়া) রুটে প্রটোকলের অধীনে নদী পরিষেবা চালু করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে।
ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্তকারী ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতুর কার্যক্রম চালু করতে অবশিষ্ট অবকাঠামো, অভিবাসন এবং শুল্ক সুবিধা দ্রুত সম্পন্ন করতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে ভারত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারতে সরকারি সফর করছেন।
সফরকালে, তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখরের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।
আরও পড়ুন: জনসমর্থনহীন সরকার ভারতের সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ: ফখরুল