মশা নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ে যারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথেষ্ট প্রচার করা হয়েছে। জনগণ এখন জানেন কেনো ডেঙ্গু হয়, কীভাবে প্রতিরোধ করতে হয়। এরপরও যদি কেউ সচেতন না হন, তাকে আইন অনুযায়ী জেল-জরিমানা করা হবে।’
ডিএনসিসি গুলশানের নগর ভবনে কিউলেক্স ও এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসির মশা নিধন কার্যক্রম নিয়ে ডা. মাহমুদা আলী এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কার্যক্রম নিয়ে ডা. আফসানা আলমগীর খান দুটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
এসময় ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ডিএনসিসির সম্পদ (রিসোর্স) বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক কীটতত্ববিদদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সে অনুযায়ী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘কিউলেক্স মশা নির্মূলে গবেষণা করে সম্ভাব্য প্রজননক্ষেত্র (হটস্পট) চিহ্নিত করে সেগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি চিরুনি অভিযান অব্যাহত থাকবে। ডেঙ্গুর কারণে যাতে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে সে জন্য ডিএনসিসি সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ কবে।’
ফোর্থ জেনারেশন লার্ভিসাইডিংয়ের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করে কীটতত্ববিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এটা মনে করাটা ভুল হবে যে, গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশী ছিল, এবছর কমে যাবে। আমাদেরকে সারা বছর কাজ করতে হবে। এখন থেকে প্রস্তুত হতে হবে। সামাজিক সংগঠনগুলোকে মশা নিয়ন্ত্রণে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদা সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, ‘ডেঙ্গুর কারণে গতবছর আমরা অনেক সাফার করেছি, আবার আমরাই সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করেছি। মশার বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আধুনিক ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগী হতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘শুধু ফগিং করে কাজ হবে না, ইন্টিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট (আইভিএম) করতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিউল্লাহ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা, কীটতত্ববিদ ডা. সাইফুর রহমান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে দেশব্যাপী সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব।
গত বছর ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে এক লাখ ১ হাজার ৩৭ জন বাড়ি ফেরেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ২০১৯ সালে ২৬৬টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যুর প্রতিবেদনের মধ্যে ২৩৪টি ঘটনা পর্যালোচনা করে ১৪৮ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত করে।
তবে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এখনো ডেঙ্গুতে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। কিন্ত থেমে নেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের হাসপাতালগুলোতে ৪৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৩৫ জন।
এছাড়া ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৩ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম নিয়মিত আপডেটে জানিয়েছে।