ভোলায় স্লুইজগেট নির্মাণ কাজে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ৪ সাংবাদিক। এ হামলার প্রতিবাদ করায় স্থানীয় গ্রামবাসীদের ওপরও হামলা করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গোলাম রাব্বানী কনস্ট্রাকশনের লোকজন। এতে অন্তত ৬জন আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে সাংবাদিক ফারুক, স্থানীয় বাসিন্দা শামিম ও সেলিম তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনা নদীর তীরে এ ঘটনাটি ঘটে। ঘটনায় শুক্রবার (২৩ মে) আজগর (৪০) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সাংবাদিক ফারুক জানান, মেঘনা নদীর তীরবর্তী একটি স্লুইজগেট নির্মাণে অনিয়মের খবর পেয়ে তিনিসহ ৫জন সাংবাদিক বৃহস্পতিবার (২২ মে) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে নির্মাণ কাজে ঢালাইয়ের অনিয়মের ভিডিও ও ছবি ধারণ করেন তারা। এসময় শ্রমিক হাফেজ তাদেরকে ভিডিও ও ছবি তুলতে বাধা দেয় ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
তিনি জানান, এরপর সেখানে থাকা বাকী ২৫ থেকে ৩০জন শ্রমিক এসএস ও জিআই পাইপ নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। এসময় স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধারের জন্য আসলে শ্রমিকরা তাদের ওপরও হামলা করেন।
এ ঘটনা তিনিসহ ৬জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ সংবাদকর্মী।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মমিন নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোনো নিন্মমানের পাথর, বালু ব্যবহার করিনি। সরকারি নীতিমালা অনুসারে পাথর, বালু, সিমেন্ট ব্যবহার করেই ঢালাই দিচ্ছি। যখন সাংবাদিকদের পরিদর্শনের সময় সেখানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকর্তা ছিল না। শুধু শ্রমিকরা ও পাহাড়াদার ছিল। তাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা কাটাকাটি হয়েছে। সাংবাদিকদেরও অবস্থা বোঝা উচিত ছিল বলেও মন্তব্য করেন এই প্রকৌশলী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি দুটি স্লুইজগেট, ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধের তীরে ব্লক ফেলার কাজ করছে। এ কাজের চুক্তিমূল্য ৭৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
স্লুইজগেট নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান কাজে অনিয়মের কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, কাজের কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। পাথর বিভিন্ন জায়গায় রাখা আছে। যেগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো ধোয়ার পরেই ব্যবহার করা হয়। তবে সাংবাদিকরা যখন কাজের সাইডে গিয়েছেন তখন সেখানে পাহাদার ও শ্রমিকরা ছিল। তাদের সঙ্গেই ঝামেলাটি হয়েছে। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই পাহাদারকে কাজ থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে।
তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহাব্বত খান জানান, হামলার ঘটনায় সাংবাদিক ফারুক বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে শুক্রবার থানায় একটি মামলা করেছেন। এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং বাকী আসামিদেরকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।