সিলেটে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জেলার সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) থেকে ৬ দফা দাবিতে তারা এ ধর্মঘট পালন করবেন।
সোমবার (৭ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্টিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সিলেট সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলাম।
তিনি জানান, সিলেটের গণপরিবহন-পণ্যপরিবহন ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিকরা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমল থেকেই বিভিন্নভাবে বঞ্চিত ও অবহেলিত। আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের রোষানলে পড়ে অবর্ননীয় দুর্ভোগ নেমে আসে সিলেটের কোটি মানুষের ওপর। ২০১৮ সালে সিলেটের সব পাথর কোয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে লাখ লাখ কর্মহীন মানুষের কারণে এ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে। অন্য দিকে রিজার্ভের বিলিয়ন ডলার খরচ করে বিদেশ থেকে পাথর আমদানি করা হচ্ছে। তারা পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে বারবার আন্দোলন সংগ্রাম করে ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পরেও তারা জুলুম নির্যাতন ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পাননি।
তিনি জানান, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৩৬ ধারায় যে প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, তা মালিক শ্রমিককে ধ্বংসের নীল নকশা। একইভাবে গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট বেসরকারি প্রতিষ্টানকে দেওয়া আরেক হয়রানি ও ষড়যন্ত্র। তাছাড়া গাড়ি তল্লাশির নামের পুলিশ ট্রাক শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচনে তরুণদের চোখে সবচেয়ে এগিয়ে বিএনপি: জরিপ
এসব কারণে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান, সিএনজি, ইমা-লেগুনা ও পাথর সংশ্লিষ্ট মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ৬ দফা দাবিতে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিলেট জেলাজুড়ে পরিবহন কর্মবিরতি (ধর্মঘট) পালন করবে।
তিনি জানান, পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকে ধর্মঘটের বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
তাদের ৬ দফা দাবি হলো— সড়ক পরিবহন আইন ২-১৮ এর ৩৬ ধারায় সরকার বাস মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০, ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যানের ক্ষেত্রে ১৫ এবং সিএনজি-ইমা ও লেগুনার ক্ষেত্রে ১৫ বছর ইকোনোমিক লাইফ নির্ধারণ করার প্রজ্ঞাপন বাতিল, সিলেটের সব পাথর কোয়ারির ইজারা স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার ও সনাতন পদ্ধতিতে বালু মহাল ও পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া, বিআরটিএ’র গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বাতিল ও গণপরিবহনের উপর আরোপিত বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহার, সিলেটের সব ক্রাশার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধ, বিদ্যুতের মিটার ফেরত ও ভাঙচুর করা মিলের ক্ষতিপূরণ এবং গাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া পাথর-বালুর ক্ষতিপূরণ, সিলেটের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে প্রত্যাহার এবং বালু পাথরসহ পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি না করা।
আরও পড়ুন: অধস্তন আদালত বিকেন্দ্রীকরণে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
এসব দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিবহনখাত সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, এই পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাখান করেছেন সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি লোকমান আহমদ। ধর্মঘট প্রত্যাখান করে বাস চলবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
লোকমান আহমদ দাবি করেন, চলমান কর্মবিরতি ও ধর্মঘট প্রকৃতপক্ষে মালিক ও শ্রমিকদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে আহ্বান করা হয়নি। বরং এটিকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা শ্রমিকদের ব্যবহার করে পাথর কোয়ারির আন্দোলন করছেন, তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রমিকদের প্রশাসনের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন।