মাওলানা সাদপন্থী তাবলিগ জামাতের নেতারা বলেছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উলামায়ে মাশায়েখ আয়োজিত ইসলামী সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের ৯০ শতাংশই দাওয়াত ও জামাতে অংশ নেননি।
এক লিখিত বিবৃতিতে সংগঠনটির নেতারা বলেন, 'দাওয়াত ও তাবলিগ জামাতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তারা ইস্যু সৃষ্টি করে স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই মাদ্রাজের ছাত্র ছিল।
বুধবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
তারা বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের বিশ্ব আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির নির্বিঘ্ন উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
কাকরাইল মসজিদে সাদ সমর্থকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণাসহ ৯ দফা দাবি ঘোষণার মধ্য দিয়ে উলামা-মাশায়েখ আয়োজিত মঙ্গলবারের ইসলামিক সম্মেলন শেষ হয়।
আরও পড়ুন: নাটোরে তাবলীগ জামাতের দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৪০
বক্তারা সম্প্রতি টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সাদ কান্ধলভির সমর্থকদের বিচার এবং স্বঘোষিত আমির সাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকানোর দাবি জানান।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- কাকরাইল মসজিদে সাদ সমর্থকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা।
২০১৮ সালে টঙ্গীতে সাদ সমর্থককে হত্যা ও চার শতাধিক অনুসারী আহত করার অভিযোগে জুবায়েরের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
দাওয়াত তাবলিগকে বিশ্বব্যাপী একটি অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে তারা বলেন, এসব দাওয়াত কার্যক্রমের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষ ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অর্জন করেছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং খ্যাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সরকার ও প্রশাসনের ব্যাপক সহায়তায় বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে।
তাদের দাবি, আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে সামনে রেখে একটি বিশেষ গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে তথাকথিত 'জুবায়েরপন্থী' তাবলিগের একটি স্বার্থান্বেষী দল দেশের কিছু উলামাকে বিভ্রান্ত করে এবং তরুণ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।
নেতারা আরও বলেন, মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে অসংখ্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
তবে তারা জানান, গত ৩ নভেম্বর জাতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের আলেমদের ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে জুবায়ের সমর্থক, কিছু অদূরদর্শী আলেম সমঝোতায় না এসে তাবলিগ ও বিশ্ব ইজতেমা ইস্যুতে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন এবং পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য মরিয়া হয়ে অপচেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছেন।
দারুল উলুম দেওবন্দের মুখপাত্র মাওলানা সৈয়দ আরশাদ মাদানী হাফিজুল্লাহ বলেন, ‘তাবলিগের দুই পক্ষই ঠিক। উভয় পক্ষের দারুল উলুম দেওবন্দ এবং উভয় পক্ষই দারুল উলুম দেওবন্দের অন্তর্গত। দূরত্ব কমান।’
পাকিস্তানের শায়খুল ইসলাম মুফতি তাকি উসমানীও কিছুদিন আগে বলেছিলেন, 'তাবলিগের দুই পক্ষই আমাদের ভাই। ঠিক যেমন হানাফী ও শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীরা। যে কেউ যাকে খুশি তাকে নিয়ে কাজ করতে পারে। এর আগে তিনি দুইবার বাংলাদেশের আলেমদের সহিংসতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান।’
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে প্রায় ৫৭ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বৈশ্বিক দাওয়া সংগঠন বা বিশ্ব ইজতেমা।
আরও পড়ুন: শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন: জামাত সকাল ৯টায়