প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার নবনিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের একটি দলকে জনগণের জীবন পরিবর্তনে আত্মনিয়োগ করতে বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে।’
বুধবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাকাডেমিতে ১২৪তম, ১২৫তম ও ১২৬তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সার্টিফিকেট প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি তাদেরকে ‘জনসাধারণের সেবক’ হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিতেও নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, আমি চাই দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে আপনারা জনগণের সেবা করবেন।
তিনি তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে একটি দেশকে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহনের পাশাপাশি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে যোগাযোগ অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের নতুন অফিসাররা সেই অনুযায়ী কাজ করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী নতুন কর্মকর্তাদেরকে ২০৪১ সালের পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে বলেছেন। কেননা সরকার ওই সময়ের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তর করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তাদের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে এবং তাদের যথাযথ পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।’
প্রশাসনের নতুন কর্মকর্তাদের সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে সেবা দেয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদেরকে নিজেদেরকে নিবেদিত করতে হবে এবং সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন যে সরকারি কর্মকর্তাদের দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা জনগণকে শিক্ষিত করা এবং যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তার সরকার বেসরকারি খাত উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, কোনও জাতি কাঙ্ক্ষিত উন্নতি করতে পারে না, যদি না একটি সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ে মিলে অগ্রসর হতে পারে।
কোভিড মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী দেশে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে।
তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশসহ উন্নত বিশ্বের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় গ্রামীণ জনগণকে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।
তিনি দেশে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
হাসিনা পরিবেশ রক্ষায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং চারা রোপণের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
গৃহহীন মানুষকে বাড়ি উপহার দেয়ার তার সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে একটি পরিবারও গৃহহীন থাকবে না। এটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল।
তিনি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন যে পাকিস্তান আমলে সেক্রেটারি জেনারেল ও মেজর জেনারেল পদে কোনো বাঙালি ছিল না, কেবল একজন কর্নেল ছিল।
তিনি বলেন, এখন স্বাধীন বাংলাদেশে সবাই সেই সুযোগ পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ১২৪তম, ১২৫তম ও ১২৬তম আইন ও প্রশাসনের ১০৩জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে সনদ ও পুরস্কার বিতরণ করেন।
এর আগে তিনি সেখানে বঙ্গবন্ধু অধ্যয়ন কেন্দ্রের ফলক উন্মোচন ও পরিদর্শন করেন। তিনি অ্যাকাডেমিতে তার বক্তব্য সম্বলিত একটি সংকলন বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমির ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমির রেক্টর মমিনুর রশিদ আমিন।