বৃহস্পতিবার এক আদেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মামলা দায়েরে তামাদির এই সময়সীমা বাড়ান।
এক মামলার শুনানিকালে ন্যায় বিচারের স্বার্থে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে আপিল বিভাগ উল্লেখ করেছেন।
আদেশে বলা হয়, ‘কেউ প্রতিকার পেতে আদালতে মামলা করতে আসতে চাইলে মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা এমন এক উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তার সেই অধিকারকে খর্ব করা যাবে না। আমরা অবগত যে, কোনো বিশেষ আইনে নির্ধারিত সময়সীমা বাড়ানোর এখতিয়ার কোনো আদালত বা ট্রাইব্যুনালকে দেয়া হয়নি। যাহোক আমরা এইনজিরবিহীন, অপ্রত্যাশিত এবং অবর্জনীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত যা সারা বিশ্বে মানুষকে ঘরবন্দী হতে বাধ্য করেছে। এ অবস্থায় আমাদের ক্ষমতার প্রয়োগ করে এবং সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদে যে ক্ষমতা অর্পন করা হয়েছে, সেটা অনুযায়ী যেসব দেওয়ানি, ফৌজদারি প্রশাসনিক আদালত বা ট্রাইব্যুনালে মামলা-মোকদ্দমা, আবেদন, আপিল, রিভিশনের মেয়াদ গত ২৬ মার্চ তামাদি হয়েছে সেসব মামলা-মোকদ্দমা, আবেদন, আপিল, রিভিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হলো।’
ফজলুল হক সরদার এবং অন্যান্য বনাম গ্রামীণফোন লিমিটেড এবং অন্যান্য’ শিরোনামে দেওয়ানি আপিল আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় শুনানির জন্য ওঠে।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উল্লেখ করেন, কোভিড-১৯ প্রভাবের কারণে দেশের বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এমন অসংখ্য মামলা আছে, যেখানে বিশেষ মেয়াদ রয়েছে। শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে প্রতিকার চাইতে পক্ষগুলোর আদালতে গিয়ে কোনো মামলা করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনার কঠিন পরিস্থিতির জনমনে ভীতির সঞ্চার করছে।
অধস্তন আদালত ৫ আগস্ট থেকে খুলেছে উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কিন্তু আবার যে লকডাউনের প্রয়োজন হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এমনটি ঘটে চলছে।
তামাদির মেয়াদ বাড়ানো সংক্রান্ত ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশের প্রসঙ্গ টেনে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ বিষয়ে আমাদের এমন সুরক্ষা প্রয়োজন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন একই মত প্রকাশ করেন। তাদের বক্তব্য সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকীসহ সমিতির অন্যান্য জ্যেষ্ঠ সদস্যরা সমর্থন করেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।
উত্থাপিত বিষয়টি যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত ও শ্রীলঙ্কা যেভাবে মোকাবিলা করেছে, সে বিষয়ক বিস্তারিত তথ্যাদি দেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এসব আইনজীবীর আইনি মতামত নিয়ে এ আদেশ দেন আদালত।
আদালতের এই আদেশকে সময়পোযোগী হিসেবে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এই আইনজীবী আদালতে যেকোনো আবেদন করার সময়সীমা নির্দিষ্টকরণ (তামাদি) বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা চেয়ে গত ৭ জুন আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিলেন।
নোটিশে বলা হয়েছিল, কিছু বার অ্যাসোসিয়েশন (আইনজীবী সমিতি) এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নেগোসিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট (এনআই) অ্যাক্ট, ১৮৮১ এর অধীনে মামলা দায়েরের নির্দেশনা প্রদান করছেন। তারা ভিন্ন ভিন্ন তারিখে মামলা দায়েরের ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা (ই-মেইলে মামলা দায়ের, স্বশরীরে মামলা দায়ের, তামাদি মওকুফের আবেদন প্রভৃতি) দিচ্ছেন। এ সকল নির্দেশনা বিচারিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে যা কাম্য নয়। এমতাবস্থায় বিচারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন থেকে একটি সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান অতীব জরুরি।’
এই নোটিশের পর সেদিনই সুপ্রিকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনআই অ্যাক্টের অধীন মামলা দায়েরসহ যেসব দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা/আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে আইনে সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে এবং যেসব মামলা বা আপিল দায়েরের ক্ষেত্রে লিমিটেশন অ্যাক্ট এর ৫ নম্বর ধারার বিধান প্রযোজ্য নয়, সেসব মামলা বা আপিল দাখিল করা যাবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারক তা গ্রহণ করে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই বিজ্ঞপ্তির পরও বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছিল না। ৭ জুনের আগের মামলা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন আইনজ্ঞরা। এ অবস্থায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে গতকাল আদেশ দিলেন।
উল্লেখ্য, ২৬ মার্চের পর তেকে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে ৫ আগস্ট থেকে অধস্তন আদালতে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেকেই আইনে নির্ধারিত সময়ে মামলা দায়ের করতে পারেননি।