নিজস্ব জমি জমা না থাকায় একমাত্র সম্বল রিক্শাভ্যান চালিয়ে তিন সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নে এগিয়ে চলেছেন আফতাবর রহমান। কিন্তু তিনি পেশায় ভ্যানচালক। তাই যা আয় করেন তা দিয়ে সাধের সঙ্গে সাধ্যের মিল খুঁজে পাচ্ছেন না।
তাঁর একমাত্র ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়াশোনা করছে। এবার আল্পনা আক্তার নামে তার এক মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।
আফতাবর রহমানের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়পলাশবাড়ি ইউনিয়নের ধারিয়া বেলসাড়া গ্রামে। ভিটেমাটি আর একটি ভ্যান ছাড়া তার আর কোনো সহায় সম্পদ নেই।
একমাত্র ছেলে মুন্না আলী বাংলা বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন কয়েক বছর যাবত। সে এখন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। এদিকে মেয়ে আলপনা আক্তার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া আফতাবর রহমান তার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে পাত্রস্থ করেছেন,আর সবার ছোট মেয়েটি পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকে।
এতদিন একমাত্র ছেলের পড়ালেখার খরচ জুগিয়ে আসছেন রিকশা ভ্যান চালিয়ে। এবার মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শুনে খরচের চিন্তায় পড়েছেন তিনি। কারণ সংসারের খরচ যোগাতে প্রতিদিন রিক্সা ভ্যান চালানো ছাড়া আর কোন পথ নেই তার।
কথার ফাকে আফতাবর রহমান জানান, ভ্যান চালিয়ে ছেলেকে আর মেয়ে দুটোকে পড়াচ্ছি। ছেলে মুন্না আলীর ঢাবিতে ভর্তির সময় ২৫ শতক আবাদী জমির মধ্যে ৫ শতক জমি বিক্রি করে ভর্তির খরচ বহন করি। পরবর্তীতে তার পড়ালেখা খরচ যোগাতে গিয়ে অবশিষ্ট ২০ শতক জমিও বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও প্রতিমাসে ৩-৪ হাজার টাকা ঢাকায় ছেলেকে পাঠানো, অন্য দুই মেয়ের পড়ালেখা খরচ এবং সাংসারিক ব্যয় বহনের একমাত্র মাধ্যম আমার ভ্যান গাড়িটি। একদিন ভ্যান নিয়ে বের না হলে সংসারে চুলায় তার হাড়ি উঠে না।
আরও পড়ুন: মেডিকেলে চান্স পাওয়া জেলে পল্লীর মেয়ে মারুফার পাশে র্যাব-৬
তিনি আরও জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে দুই সন্তান পড়াশোনার সময় শিক্ষাবৃত্তি পায় ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে।
এ শিক্ষাবৃত্তির টাকা তার পরিবারের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করেছে। মেয়েকে ভর্তি করানোর টাকা যোগাড় করতে ইতোমধ্যে তিনি তার নিকট আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন। একদিকে ভর্তির টাকা অন্যদিকে মাসে মাসে খরচের টাকা কোথা থেকে আসবে সেই চিন্তায় অস্থির তিনি। ভ্যান চালিয়ে আগের মত আর আয় হয়না। থ্রি-হুইলার ও অটোচার্জারের ভিড়ে ভ্যান গাড়ির ভাড়া পাওয়া দুস্কর হয়ে উঠেছে। এছাড়াও বাজারে নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে।
সদ্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী আলপনা আক্তার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কুশডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
তিনি বলেন, বাবা অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছেন। চিকিৎসক হয়ে বাবা-মাসহ অসহায় মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো। বাবার স্বপ্ন পুরণে সকলের কাছে দোয়া চান তিনি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভ্যানচালক বাবার মেয়ে আলপনা মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে, এটা অবশ্যই গর্বের। মেয়েটির ভর্তির জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
আরও পড়ুন: মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দেশসেরা মীম ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন!