করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে চলমান লকডাউন ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউন ও জনসমাগমের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সরকার ছয়টি নতুন নির্দেশনা জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দোকান ও শপিংমলগুলো স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য সংস্থা ও বাজার পরিচালনা কমিটি এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নির্দেশনা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও কঠোর লকডাউন আসতে পারে: কাদের
এই নির্দেশনা অনুসারে, পণ্যবাহী যানবাহন ব্যতীত কাউকে ভারত থেকে বিমান, স্থল ও নদী পথের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
এছাড়াও যে সকল বাংলাদেশি এখন ভারতে রয়েছেন এবং তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কেবল তারাই ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছ থেকে রিলিজ/ সার্টিফিকেট গ্রহণের পর দেশে প্রবেশ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে তাদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: লকডাউনেই খুলেছে বিপণীবিতানের দরজা, সড়কে চাপ
মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং চীন থেকে যারা করোনা নেগেটিভ সনদপত্র এবং ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদপত্র নিয়ে দেশে আসবেন তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের আগমন এবং কোয়ারেন্টাইন পালনের সময়কাল সম্পর্কে তাদের স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করতে হবে।
তবে উক্ত দেশগুলো থেকে আগত যাদের শুধু করোনা নেগেটিভ সনদপত্র রয়েছে কিন্তু ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদপত্র নেই তাদেরকে সরকারি সুবিধাযুক্ত প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ৩-৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাদেরকে পরীক্ষা করার পর বাড়িতে যাওয়ার অনুমতি দিলে, তারা তাদের বাড়িতে যাবে এবং নিজ বাড়িতে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকবে।
আরও পড়ুন: লকডাউন: ২৫ এপ্রিল থেকে খুলবে দোকান-শপিংমল
অন্যান্য দেশ থেকে আগতদের ১৪ দিনের জন্য সরকারি সুবিধাযুক্ত প্রতিষ্ঠানে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঈদ-উল-ফিতরের জামাত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।
এর আগে ২৬ এপ্রিল জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কোনও উন্নতি না হওয়ায় সরকার বর্তমান লকডাউনটি ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী কোভিড পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে ২০ এপ্রিল একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল যেখানে চলমান কঠোর লকডাউন ২২ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হবে বলে জানানো হয়েছিল।
মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকায়, এর বিস্তার রোধের পদক্ষেপের অংশ হিসাবে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য দেশব্যাপী একটি ঢিলেঢালা লকডাউন দিয়েছিল। পরে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিলের পর্যন্ত 'কঠোর' লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।
২৩ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল যেখানে বলা হয়েছে, যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রাখার শর্তে ২৫ এপ্রিল থেকে (সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা) দোকান ও শপিংমলগুলো খোলা থাকবে।
বাংলাদেশের কোভিড পরিস্থিতি
বুধবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৭৭ জন মারা গেছেন। এনিয়ে মোট মৃত্যু ১১ হাজার ৩০৫ জনে দাঁড়াল।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৯৫৫ জনের শরীরে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে মোট শনাক্ত ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৬১৪ জনে পৌঁছেছে।
এর আগে মঙ্গলবার অধিদপ্তর জানায়, এক দিনে মহামারি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৭৮ জন মারা গেছেন এবং ৩ হাজার ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ হাজার ২০৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শনাক্তের হার ১০.৪৮ শতাংশ।
২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৩৯২ জন। মোট সুস্থ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৩১৯ জন। সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। মৃত্যুর হার ১.৫০ শতাংশ।