বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের বৃহত্তর কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ওয়াইল্ডটিমের দুই দিনব্যাপী ইন্টিগ্রেটেড টাইগার হ্যাবিট্যাট কনজারভেশন ওয়ার্কশপ সোমবার রাজধানীর কসমস সেন্টারে শেষ হয়েছে।
ওয়াইল্ডটিম এবং বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর, ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় দুই দিনব্যাপী এই কর্মশালায় বিপুল সংখ্যক উচ্চাকাঙ্ক্ষী বন্যপ্রাণী গবেষক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ড. রাজীব কালসি পরিচালিত 'বেসিকস অব রেডিও-টেলিমেট্রি ফর মনিটরিং ওয়াইল্ডলাইফ' সেশনের মধ্য দিয়ে কর্মশালার দ্বিতীয় দিন শুরু হয়। এরপর সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত 'এস্টিমেটিং ডেনসিটিস ইউজিং ডিসটেন্স স্যাম্পলিং' এবং বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত 'ইউজ অব মার্ক-রিক্যাপচার ফর জেনারেটিং এস্টিমেটস' শীর্ষক ড. কালসির আরও দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ড. রাজীব কালসির পাশাপাশি ড. কমলকা ভট্টাচার্য অংশগ্রহণকারীদের জন্য একটি গ্রুপ অ্যাক্টিভিটি সেশন পরিচালনা করেন। এরপর মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ড. মো. আনোয়ার হোসেনের 'এস্টিমেটিং অ্যান্ড কনজার্ভিং দ্য প্যাটার্নস অব ডাইভার্সিটি ইউজিং ফিল্ড সার্ভে ডেটা' এবং ড. মেধা নায়েকের (ভারত থেকে) 'হিউম্যান-টাইগার ইন্টারঅ্যাকশন' শীর্ষক দুটি ভার্চুয়াল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী অধিবেশনে 'লিস্ট কজেস অ্যান্ড ড্রাইভারস অব হিউম্যান টাইগার কনফ্লিক্ট ইন সুন্দরবন' শীর্ষক আরেকটি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত 'ক্যামেরা ট্র্যাপিং ইন সুন্দরবন অ্যান্ড ডেমনস্ট্রেশন' শীর্ষক কর্মশালার চূড়ান্ত অধিবেশন পরিচালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধ্যাপক মো. আবদুল আজিজ।
অংশগ্রহণকারীদের জন্য ১৫ মিনিটের প্রশিক্ষণোত্তর মূল্যায়ন পরীক্ষা; একই সময়ের আরেকটি ফিডব্যাক সেশনের পর কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠান এবং অংশগ্রহণকারী ও কর্মশালার তত্ত্বাবধায়ক-সহযোগীদের মধ্যে সার্টিফিকেট বিতরণের মধ্য দিয়ে কর্মশালার আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।
ওয়াইল্ডটিমের প্রতিষ্ঠাতা ও কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে সমাপনী অধিবেশনে ওয়াইল্ডটিমের সিইও ও মুখপাত্র ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়াইল্ডটিমের চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত পক্ষীবিদ ইনাম আল হক, কসমস গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ খান, জাবি অধ্যাপক এম আবদুল আজিজ, উদ্ভাবনী সংরক্ষণবিদ নোয়াম বেদিন এবং ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট ইন্ডিয়ার দুই জন ফ্যাসিলিটেটর ড. কমলকা ভট্টাচার্য ও ড. রাজীব কালসি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের ভূয়সী প্রশংসা করে এনায়েতুল্লাহ খান বলেন, ‘যখন কেউ শিখতে থেমে যায়, তখন তার বেঁচে থাকা বন্ধ করে দেয় এবং বিষয়টি ততটাই সহজ। আমাদের সবাইকে মরতে হবে, আজ বা আগামীকাল। কিন্তু আমি মনে করি অনেক মানুষ তাদের শারীরিক মৃত্যুর অনেক আগে মারা যায়, যখন তারা শেখার অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলে। ব্যক্তিগতভাবে, আমি এখানে আপনাদের সকল আগ্রহী বন্যপ্রাণী গবেষকদের একসঙ্গে এবং বিশেষকরে আমাদের নারী অংশগ্রহণকারীদের অংশগ্রহণ দেখে খুব আনন্দিত। কারণ আমি বিশ্বাস করি যে সমাজে আমাদের নারী জনসংখ্যার অবদান অপরিসীম।’
অনুষ্ঠানে মাসুদ খান বলেন, ‘আমি শুরু থেকেই ওয়াইল্ডটিমের যাত্রা ও সংগ্রাম দেখেছি। আমার বাবা এনায়েতুল্লাহ খান, ইনাম আল হক, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম ও সমগ্র ওয়াইল্ডটিম সংগ্রাম, প্রচেষ্টা ও ত্যাগের মাধ্যমে কার্যকর সংরক্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমি এই সফল কর্মশালাটি উপভোগ করতে পেরে খুব খুশি এবং আমি সমস্ত অংশগ্রহণকারী-সহায়তাকারী এবং পুরো দলকে শুভকামনা জানাই।’
এই বিশেষ গবেষণা কর্মশালার আয়োজনের জন্য ওয়াইল্ডটিমের প্রশংসা করে ড. রাজীব কালসি বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আমাদের সময়ের একটি জরুরি বিষয়। কোনো সরকার একা এটি করতে পারে না, তাই আমি এই কর্মশালার জন্য কসমস ও ওয়াইল্ডটিমের সত্যিই প্রশংসা করি।’
অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, ‘এই কর্মশালায় অংশ নিতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত।’
অংশগ্রহণকারীদের প্রতিনিধিত্ব করে, বন্যপ্রাণী জীববিজ্ঞানী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফয়সাল চৌধুরী শূরুপ বলেছেন: ‘এই দুই দিনে, আমরা আমাদের ফ্যাসিলিটেটরদের কাছ থেকে আলোচনা এবং নতুন অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে শিখেছি। অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে, আমি সুযোগ এবং আতিথেয়তার জন্য ওয়াইল্ডটিমকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
আরও পড়ুন: বাঘের সমন্বিত বাসস্থান সংরক্ষণ: ২৬-২৭ ফেব্রুয়ারি কসমস সেন্টারে ওয়াইল্ডটিমের আয়োজনে কর্মশালা
অংশগ্রহণকারীদের এবং ফ্যাসিলিটেটরদের হাতে সার্টিফিকেট হস্তান্তরের আগে বিশেষ কর্মশালার সমাপ্তি করে, এনাম উল হক বলেন: ‘আপনার জন্য আমার একটি মাত্র বাক্য আছে, এবং আমি এটি কারও কাছ থেকে ধার করেছি: 'আপনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছু অবদান রাখার আগে মরতে লজ্জা পাবেন।' - এবং এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করার জন্য আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।’
কর্মশালায় গবেষণার নকশা, ফিল্ড ডেটা সংগ্রহের কৌশল, ডেটা বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন লেখার নীতিগুলো সহ -বিভিন্ন বিষয়গুলো কভার করে সফল বন্যপ্রাণী গবেষণা প্রকল্পের পরিকল্পনা, নকশা এবং পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রদানের জন্য বেশ কয়েকটি কার্যকর সেশন দেখানো হয়েছে। ; জিপিএস ট্র্যাকিং, রিমোট সেন্সিং এবং ক্যামেরা ট্র্যাপ সহ বন্যপ্রাণী গবেষণায় ব্যবহৃত সর্বশেষ সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি সহ অংশগ্রহণকারীদের জ্ঞান এবং নির্দেশিকা প্রদান।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড প্রাইভেট সেক্টর ওয়্যার সার্ভিস এবং এই এক্সক্লুসিভ ওয়ার্কশপের মিডিয়া পার্টনার ছিল দেশের স্বনাধন্য সংবাদ সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: কসমস সেন্টারে ওয়াইল্ডটিমের বাঘ সংরক্ষণ কর্মশালা শুরু