হেফাজতের হরতালসহ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকার নমনীয় নয় বরং ধৈর্যর পরিচয় দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, ‘সরকার কখনোই নমনীয় নয়। সরকার সব সময় ধৈর্যের পরিচয় দেয়। এই ধৈর্যটা নেয়া হচ্ছে, আপনারা দেখেছেন ইতোমধ্যে কতগুলো নিরীহ মাদরাসাছাত্র মারা গেছে। এদের ঢাল হিসেবে নিয়ে ব্যবহার করা, আমি মনে করি এটা তারা খুবই অন্যায় কাজ করছেন। ধর্মের নামে তাদের ভুল বুঝিয়ে তারা করে যাচ্ছে। এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
রবিবার বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কতিপয় উশৃঙ্খল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মদনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাড়িঘর, প্রেস ক্লাসবসহ মানব সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে যাচ্ছেন। এসব জাতীয় ক্ষয়ক্ষতি সকল প্রকার উশৃঙ্খলতা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্যথায় জনগণের জানমাল, সম্পদ রক্ষর্থে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকার উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এতিম, ছোটছোট শিশুদের রাস্তায় এনে বসিয়ে দিচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় তাদের সামনে রেখে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা হচ্ছে, তারাই ভিকটিম হচ্ছে। আমরা এগুলোকে মনে করি নাশকতা, এগুলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।’
‘আপনাদের মাধ্যমে জানাচ্ছি এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য, নতুন আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে যাতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার সব ধনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেহেতু আমরা ধৈর্য সহকারে দেখছি, এখন নিশ্চয়ই আমরা এদের প্রতিকার করব, এগুলো প্রতিহত করব, এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, তাদের যে রণকৌশল, বাঁশের কেল্লা যুক্ত হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, আগে যে জঙ্গি সংগঠনগুলো সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য যে প্রয়াস চালিয়েছিল তারাই নতুনভাবে এখানে সম্পৃক্ত হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। সবগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। যে যেখানে থাকুক, আমরা কাউকে ছাড় দেব না।
জঙ্গি সংগঠন নিয়ে কাদের বুঝিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আপনারা দেখেছেন, কিছু জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, এর মধ্যে মদদদাতা রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কিছু অদৃশ্য শক্তি, যখন আমরা সুতো ধরে টান দেই, এইসব জঙ্গি সংগঠনের নেতারা আগে জামায়াত-শিবিরের নেতা ছিলেন বলে আমরা দেখেছি। হরকাতুল জিহাদ বলুন, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম বলুন, যেটাই বলুন, সবগুলো মূল নেতৃত্ব এসেছে জামায়াত-শিবির থেকে।’
আরও পড়ুন: হরতাল: সুনামগঞ্জে হেফাজত ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া সব সময়ই দুই দলে মারপিট করে, দুই গ্রাম, দুই দল সব সময়ই মারপিট করে। আজকে কেন যে নিরীহ মানুষের বাড়িঘর পুড়াচ্ছেন, সরকারি সম্পদ নষ্ট করছেন। আমরা এর পেছনে যে কারণ অনুমান করছি, আগে জঙ্গিরা নাশকতা করার জন্য যে রকমের প্রচেষ্টা নিয়েছিল সেই রকমের হতে পারে। জামায়াত-শিবির হতে পারে, বিএনপির লোকজন মদদ দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘হেফাজত হরতাল ডেকেছে। এখন হেফাজতের ভেতরে যেগুলো দেখছি, অনেক উস্কানি চলে আসছে। বিভিন্ন মহল থেকে ফেসবুকে মাধ্যমে, সেগুলোর মাধ্যমে যদি খোঁজা যায় তাহলে দেখা যাবে তারা অন্য দলের, অন্য মতাদর্শের লোকজন। আমরা সবাইকেই দায়ী করছি, সবকিছু গুছিয়ে সাক্ষী-প্রমাণ নিয়ে এগুলোর ব্যবস্থা আমরা নেব।’