হেফাজতের হরতাল
হেফাজতের হরতাল: নারায়ণগঞ্জে পুলিশ-র্যাবের ৬ মামলা
রবিবারেহেফাজতে ইসলামের র সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতার ঘটনায় পৃথক ছয়টি মামলা হয়েছে।
সোমবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পুলিশ পাঁচটি এবং র্যাব বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে।
প্রত্যেক মামলায় ২৫ থেকে ৩০ জন এজাহারনামীয় আসামি এবং অজ্ঞাত আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সবগুলো মামলায় নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতসহ আসামি করা হয়েছে প্রায় তিন হাজারের মতো ব্যক্তিকে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, র্যাব ও পুলিশের এই পাঁচটি মামলা হয়েছে নাশকতার অভিযোগে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। অপর একটি মামলা হয়েছে সরকারি কাজে বাধা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও আহত করার অভিযোগে।
তবে এই ছয় মামলায় এখন পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করা না হলেও নাশকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করে তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রবিবার হেফাজতের ডাকা হরতালের সমর্থনে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত এলাকা ছিল দিনভর হরতাল সমর্থকদের দখলে। প্রায় ১৮টি যানবাহন আগুনে পুঁড়িয়ে দেয়াসহ বিজিবি ও পুলিশের সাথে হরতাল সমর্থনকারীদের দফায় দফায় ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
হেফাজতের নেতা-কর্মী ও পিকেটারদের তাণ্ডবে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। হরতালের পুরো সময়জুড়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও ছিল পিকেটাররা। অন্তত দশজন সাংবাদিককে মারধরসহ দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়ি ভাঙচুর করে তারা।
৩ বছর আগে
সরকার নমনীয় নয়, ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
হেফাজতের হরতালসহ দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে সরকার নমনীয় নয় বরং ধৈর্যর পরিচয় দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, ‘সরকার কখনোই নমনীয় নয়। সরকার সব সময় ধৈর্যের পরিচয় দেয়। এই ধৈর্যটা নেয়া হচ্ছে, আপনারা দেখেছেন ইতোমধ্যে কতগুলো নিরীহ মাদরাসাছাত্র মারা গেছে। এদের ঢাল হিসেবে নিয়ে ব্যবহার করা, আমি মনে করি এটা তারা খুবই অন্যায় কাজ করছেন। ধর্মের নামে তাদের ভুল বুঝিয়ে তারা করে যাচ্ছে। এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
রবিবার বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: নারায়ণগঞ্জে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষ: গুলিবিদ্ধসহ আহত ২০
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কতিপয় উশৃঙ্খল ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ধর্মীয় উন্মদনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলায় সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছে, যার মধ্যে উপজেলা পরিষদ, থানা ভবন, সরকারি ভূমি অফিস, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বাড়িঘর, প্রেস ক্লাসবসহ মানব সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি করে যাচ্ছেন। এসব জাতীয় ক্ষয়ক্ষতি সকল প্রকার উশৃঙ্খলতা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।’
অন্যথায় জনগণের জানমাল, সম্পদ রক্ষর্থে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘সরকার উদ্বেগের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এতিম, ছোটছোট শিশুদের রাস্তায় এনে বসিয়ে দিচ্ছেন। কোনো কোনো জায়গায় তাদের সামনে রেখে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করা হচ্ছে, তারাই ভিকটিম হচ্ছে। আমরা এগুলোকে মনে করি নাশকতা, এগুলো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া।’
‘আপনাদের মাধ্যমে জানাচ্ছি এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য, নতুন আইন অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে যাতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার সব ধনের ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেহেতু আমরা ধৈর্য সহকারে দেখছি, এখন নিশ্চয়ই আমরা এদের প্রতিকার করব, এগুলো প্রতিহত করব, এদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব,’ বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, তাদের যে রণকৌশল, বাঁশের কেল্লা যুক্ত হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, আগে যে জঙ্গি সংগঠনগুলো সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য যে প্রয়াস চালিয়েছিল তারাই নতুনভাবে এখানে সম্পৃক্ত হয়েছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। সবগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। যে যেখানে থাকুক, আমরা কাউকে ছাড় দেব না।
জঙ্গি সংগঠন নিয়ে কাদের বুঝিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আপনারা দেখেছেন, কিছু জঙ্গি সংগঠন রয়েছে, এর মধ্যে মদদদাতা রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের কিছু অদৃশ্য শক্তি, যখন আমরা সুতো ধরে টান দেই, এইসব জঙ্গি সংগঠনের নেতারা আগে জামায়াত-শিবিরের নেতা ছিলেন বলে আমরা দেখেছি। হরকাতুল জিহাদ বলুন, আনসার উল্লাহ বাংলা টিম বলুন, যেটাই বলুন, সবগুলো মূল নেতৃত্ব এসেছে জামায়াত-শিবির থেকে।’
আরও পড়ুন: হরতাল: সুনামগঞ্জে হেফাজত ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া সব সময়ই দুই দলে মারপিট করে, দুই গ্রাম, দুই দল সব সময়ই মারপিট করে। আজকে কেন যে নিরীহ মানুষের বাড়িঘর পুড়াচ্ছেন, সরকারি সম্পদ নষ্ট করছেন। আমরা এর পেছনে যে কারণ অনুমান করছি, আগে জঙ্গিরা নাশকতা করার জন্য যে রকমের প্রচেষ্টা নিয়েছিল সেই রকমের হতে পারে। জামায়াত-শিবির হতে পারে, বিএনপির লোকজন মদদ দিতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘হেফাজত হরতাল ডেকেছে। এখন হেফাজতের ভেতরে যেগুলো দেখছি, অনেক উস্কানি চলে আসছে। বিভিন্ন মহল থেকে ফেসবুকে মাধ্যমে, সেগুলোর মাধ্যমে যদি খোঁজা যায় তাহলে দেখা যাবে তারা অন্য দলের, অন্য মতাদর্শের লোকজন। আমরা সবাইকেই দায়ী করছি, সবকিছু গুছিয়ে সাক্ষী-প্রমাণ নিয়ে এগুলোর ব্যবস্থা আমরা নেব।’
৩ বছর আগে
হেফাজতের হরতাল: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রেস ক্লাব ও ট্রেনে হামলা
হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে রবিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
হরতাল-সমর্থকরা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে।
হামলার পর সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে হামলা ও ভাঙচুর করেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকরা।
আরও পড়ুন: হাটহাজারীর পরিস্থিতি থমথমে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
এছাড়াও হরতাল সমর্থকরা সদর উপজেলার জেলা পরিষদ ভবন, পৌরসভা ভবন, পুলিশ লাইন, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল স্কুল, ভূমি অফিস, আলাউদ্দিন সংগীত একাডেমি, ফুয়ের্তলা বাস স্ট্যান্ডসহ কয়েকটি বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়।
এ সময় তারা আলাউদ্দিন সংগীত একাডেমি ভবন, সদর উপজেলার ভূমি অফিস এবং ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল স্কুল ভবনে আগুন দেয়।
এদিকে হরতাল সমর্থকরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে হামলা করে এবং কয়েকজন সাংবাদিককে ক্লাব ভবনে আটক করে রাখে।
হরতাল সমর্থকদের হামলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি আহত হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, ‘হরতাল সমর্থকরা বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি ভবন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছে। এগুলো ষড়যন্ত্রের অংশ।’
প্রসঙ্গত, রবিবার হেফাজতে ইসলামের ডাকা দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলছে।
আরও পড়ুন: মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষ
৩ বছর আগে
হেফাজতের হরতাল: হাটহাজারীতে সড়ক কেটে অবরোধ
হেফাজতে ইসলামের ডাকে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে রবিবার হরতাল চলছে। শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এবং চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের গুলিতে পাঁচ কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে রবিবার সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডাকে দলটি।
হরতাল চলাকালে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা, সিএনজি ও ব্যক্তিগত গাড়িসহ হালকা যানবাহন চলাচল করলেও কোনো ধরনের দুরপাল্লার যাত্রীবাহী গাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে যায়নি।
আরও পড়ুন: সিলেটে শান্তিপূর্ণ হরতাল চলছে, ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস
এদিকে, হরতালের সমর্থনে ভোরে ফজরের নামাজের পর বিভিন্ন এলাকায় হেফাজতের নেতা-কর্মীরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে।
হাটহাজারীতে শুক্রবার দুপুরে সংঘর্ষের পর থেকে এখনও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা। সেখানে শুক্রবার ইটের প্রাচীর তৈরি করে অবরোধ করলেও পরে সে দেয়াল তুলে ফেলে। রবিবার ভোর থেকে রাস্তা কেটে দিয়ে খালের মতো বিশাল লম্বা গর্ত করে অবরোধ অব্যাহত রেখেছে ছাত্ররা। এর মধ্যে শনিবার দ্বিতীয়বারের মতো বিক্ষুব্ধ মাদরাসার ছাত্ররা হাটহাজারীর ডাকবাংলোতে আগুন দিয়েছে।
আরও পড়ুন: হাটহাজারীর পরিস্থিতি থমথমে, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
এব্যাপারে হাটহাজারী থানার ওসি (তদন্ত) রাজিব শর্মা জানান, বেশ কিছু নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে ডাকবাংলোয় আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় তারা নিচ তলার স্টোর রুমে থাকা দুটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেয়।
এর আগে হেফাজত-পুলিশ সংঘর্ষের সময় হেফাজতের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ডাকবাংলো ও স্থানীয় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে হামলা চালায়।
বর্তমানে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ব্যাপক পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাটহাজারীতে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে নিহত ৪
মোদিবিরোধী বিক্ষোভ: বায়তুল মোকাররম এলাকায় পুলিশের সাথে মুসল্লিদের সংঘর্ষ
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, ভোর থেকে এখনও শান্তিপূর্ণ হরতাল চলছে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোরে চট্টগ্রামের হালিশহর বাকলিয়া এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে নেতা-কর্মীরা। এছাড়া রাস্তায় অবস্থান করছে। জেলার বাঁশখালী পটিয়া ফটিকছড়িতসহ বিভিন্ন উপজেলায় হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ চলছে।
৩ বছর আগে