সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের উপর আস্থা রাখুন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চেষ্টা করে যাব।’
শনিবার (২৪ আগস্ট) ‘কমিশনার’স মিট দ্য প্রেস’ ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের অত্যন্ত সংকটকালে আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগদান করেছি। বিগত সময়ের উচ্চাভিলাষী ও অপেশাদার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। এর ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান এবং বিগত সরকারের পতনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছিল।’
মাইনুল হাসান বলেন, ডিএমপিসহ সারাদেশে অনেক পুলিশ সদস্য আহত এবং নিহত হয়েছেন। প্রাণভয়ে আত্মগোপনে ছিলেন মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা। অনেক স্থানে আমাদের অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ট্রাফিকের প্রায় সকল অফিস ও বক্স ভাঙচুর হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে ২২টি থানা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক যানবাহন পোড়ানো হয়েছে। প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুণ্ঠিত হয়েছে। ইতোপূর্বে এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন পুলিশ বাহিনী হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করি যাতে পুলিশ সদস্যরা ভয় না পেয়ে দ্রুত কাজে ফিরে আসেন। কিন্তু ইতোমধ্যে কিছু উচ্চাবিলাসী ও অপেশাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তাদের ব্যাপক ক্ষোভ জন্মায় এবং নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কর্মবিরতি শুরু করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্বে আইজিপি, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আমি নিজে রাজারবাগ ও মিরপুর পুলিশ লাইন্সসহ বিভিন্ন পুলিশ স্থাপনায় যাই। তাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে কিছু দাবি তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। বাকিগুলো দ্রুততম সময়ে মেটানোর আশ্বাসের প্রেক্ষিতে পুলিশ সদস্যরা তাদের কর্মস্থলে ফিরে আসেন এবং দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
আরও পড়ুন: পুলিশে ব্যাপক রদবদল, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে
ডিএমপি কমিশনার বলেন, এই সংকটকালে ভগ্ন মনোবলের পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের ভীতি দূর করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারা দেশে প্রতিটি থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরকে মোতায়েন করা হয়। তাদের উপস্থিতির ফলে ভীতসন্ত্রস্থ পুলিশ সদস্যসহ জনমনে আস্থা ফিরে আসে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি ঘটতে থাকে।
তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় সকল থানার কার্যক্রমসহ ট্রাফিক বিভাগ ও অন্যান্য সকল বিভাগের কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সচল করতে সক্ষম হই। আমাদের এই সংকটকালে বিজিবি ও আনসার সদস্যরাও তাদের সার্বিক সহযোগিতা আমাদেরকে দিয়েছেন। পাশাপাশি ছাত্র-জনতাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন পুলিশের মনোবল বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়তা করেছেন।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘ঢাকা আপনার-আমার-সকলের প্রিয় শহর। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, কোনো ধরনের অপরাধমূলক কাজে অংশ নেবেন না। যে যেখানে আছেন সবাই আইন ও বিধি মেনে চলুন। ঢাকা মেট্রাপলিটন পুলিশ সবসময় আপনাদের পাশে আছে। একই সঙ্গে আমরা আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দানকারী বীর শহীদ, আহত ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন ডিএমপি কমিশনার।
আরও পড়ুন: নতুন ওসি পেল ডিএমপির ১৩ থানা