রমজানের তৃতীয় দিনে এসে এখনো সহনীয় আছে নিত্যদিনের মুদি পণ্যের দাম। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির ফল।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগ, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা এবং ফকিরাপুল বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুদি দোকানে প্রতি কেজি ছোলাবুট বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৩০ টাকায়। দোকানিরা জানান, গতবছর ছোলাবুটের দাম ছিল কেজিপ্রতি ১২০-১৪০ টাকা।

মানভেদে বেসন বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৮০ টাকা কেজিতে। ডাবলি ১৫০, কাবলি দানা ২৫০, চিনি ১২০, ডিম ডজনপ্রতি ১৩০ এবং মুড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ টাকা দরে।

শান্তিনগর বাজারের মুদি দোকানদার মনির বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর রমজানে এসব পণ্যের দাম খুব একটা বাড়েনি। অনেক পণ্যের দাম কমতি।’ এসব পণ্যের বাইরে মসলাজাত পণ্যের দামও সহনশীল অবস্থায় আছে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: রোজার দ্বিতীয় দিনেও বাজারে নেই সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা

বাজার করতে আসা ক্রেতা সুবাহ বলেন, ‘এ বছর বাজারে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য কোনো পণ্যের তেমন একটা সংকট নেই, দামও হাতের নাগালের মধ্যেই। ইসবগুল, এলাচি, দারুচিনি, ধনিয়া, হলুদের গুড়া, মরিচের গুড়া, কিসমিস, বাদামসহ এসব পণ্যের দাম আগের বছরের মতোই।’

দেশীয় ফলের দাম চড়া

মুদিপণ্যের দাম সহনীয় হলেও এবারের রমজানে চড়া দেশীয় ফলের দাম। বাজার ঘুরে দেখা যায়, জাতভেদে প্রতিকেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে। ক্রেতারা জানান গতবছর সময়ে পেঁপের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৮০-১২০ টাকা।

এর বাইরে সাইজ অনুযায়ী বেল বিক্রি হচ্ছে ১২০-২৫০ টাকায়। অনেকক্ষেত্রে বেলের দাম ছাড়িয়ে যাচ্ছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। রমজানের ইফতারে বেলের শরবত অনেকের প্রিয় হলেও দামের কারণে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।

পেয়ারা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৫০ টাকায়, বড়ই ১৫০-১৮০ টাকা, আনারস প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকা, বাংগি প্রতি পিস ১৫০-১৮০ টাকা এবং তরমুজ প্রতিকেজি ৬০-৮০ টাকা।

সেগুনবাগিচা বাজারের ফল ব্যবসায়ী শামসুল হক বলেন, এবার অনেক ফল রোজাকে সামনে রেখে মৌসুমের আগেই বাজারে উঠেছে। এখন তরমুজের সিজন না। কিন্তু রোজার কারণে চাষীরা মাঠ থেকে তরমুজ তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। অন্যদিকে বড়ইয়ের মৌসুম শেষের দিকে, পেঁপের ফলনও এবার ভালো না- এতে করে দেশি ফলের বাজার এই রমজানে চড়া।

আরও পড়ুন: রাজধানীর কাঁচাবাজারে বেগুনে আগুন, লেবু আকাশচুম্বী

দাম বাড়তি আপেল-মাল্টারও

দেশি ফলের বাইরে অন্যান্য ফলেরও দাম বাড়তি বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকায়, আপেল ৩২০-৩৫০ টাকা, নাসপাতি ৩৮০-৪২০ টাকা, কমলা ২৫০-২৮০ টাকা এবং অ্যাভোকাডো ৮০০-১২০০ টাকা।

শান্তিনগর বাজারে ফল কিনতে আসা ক্রেতা মঈনুল বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় প্রতিটি ফলে কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০-১০০ টাকা করে।’ বিশেষ করে বাঙ্গি এবং তরমুজের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন তিনি।

অন্যান্য ফলের দাম চড়া হলেও এ বছর খেজুর বিক্রি হচ্ছে কিছুটা কমে। আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়ায় জাতভেদে প্রতিকেজি খেজুরে দাম কমেছে ১০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারে মারিয়াম খেঁজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৮০০ টাকা কেজিতে, মাবরুম ৮০০-১২০০ টাকা, আজওয়াজা ৮০০-১০০০ টাকা, কলমি ৭০০-৯৫০, দাবাস ৪০০-৫০০ এবং ফরিদা ৪০০-৫০০ টাকা কেজিপ্রতি।

খেঁজুর ব্যবসায়ী ফয়সাল বলেন, রোজা শুরুর আগেও প্রতিকেজি খেঁজুরের দাম বর্তমানের থেকে ২০০-৪০০ টাকা বেশি ছিল। এখন যে আজওয়াজা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকায়, রোজার আগে তার দাম ছিল ১২০০ টাকা। মাবরুমের দাম ছিল ১৩০০-১৫০০ টাকা। আমদানি শুল্ক কমানোয় খেঁজুরের দামও কমে এসেছে বলে জানান তিনি।

রোজার দিন সামনে বাড়তে থাকার পাশাপাশি বাজার আরও স্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের তারাহুরো না করে প্রয়োজনমাফিক পণ্য কেনার পরামর্শ দেন তারা।