সুপ্রিম কোর্ট বারে আইনজীবী পান্নার চেম্বারে সাক্ষাতের সময় রবিবার মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী পান্না বলেন, ‘আগাগোড়াই বলেছি এটা (চার্জশিট) একটা মনগড়া উপন্যাস। মূলত মূল আসামিদের এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন কিছু নয়, জজ মিয়া ও জাহালমের আরেকটা সংস্করণ।’
আদালতে মিন্নির দেয়া জবানবন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেটাও (১৬৪ ধারার জবানবন্দি) একটা উপন্যাস। সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি কোর্টকে বলেছেন-এতো সুন্দর করে লেখা যা চিন্তার বাইরে। সুস্থ মাথায় এতো সুন্দরভাবে লেখতে পারে না!’
তাহলে সেই জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টে সিনিয়র এ আইনজীবী পান্না বলেন, ‘আগেই করা হয়েছে। মিন্নি নিজে জেলখানা থেকে করেছে।’
আরেক প্রশ্নে আইনজীবী বলেন, ‘এটাতো (জবানবন্দি) পুলিশের কাছে ছিলো। সেখানটা বাদে তো আর আসতে পারে না। ইতির্পূবেও আমরা দেখেছি এটা গণমাধ্যমে এসেছে। কোর্টের কাছে দেয়ার পূর্বে এটা প্রকাশিত হয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। এটা আদালত অবমাননা।’
সাক্ষাতের পর মিন্নির বাবা সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, আমাদের ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে হলো-সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না স্যারের সাথে দেখা করা এবং তার সাথে আইনি পরামর্শ নেয়া।
‘দ্বিতীয়ত হলো মিন্নি অসুস্থ। তাকে রিমাণ্ডের নামে যে নির্যাতন করা হয়েছে, তারই ভয়াবহতায় আজকে মিন্নি ভুগতেছে। ওর হাঁটুতে ব্যথা, ওকে মারধর করা হয়েছে। ওকে জয়েন্টে জয়েন্টে পেটানো হয়েছে। এ কারণে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিবো। চিকিৎসার একান্ত প্রয়োজন। ওর জয়েন্টে জয়েন্টে আঘাত করছে। তারপর মাথায় পিস্তল ধরেছে। ভয়ভীতি দেখাইছে। এরপর থেকেই ও বিষন্নতায় ভূগতেছে। ওর চিকিৎসা একান্ত প্রয়োজন এজন্যই ঢাকায় আসা।’
প্রসঙ্গত, ২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর মধ্যে মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।
১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকায় বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওই দিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গেপ্তার দেখায় পুলিশ।
পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। এরপর ৩০ জুলাই জেলা ও দায়রা জজ আদালত তার জামিন আবেদন নাকচ করেন।
পরবর্তীতে ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন। জামিনের শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, মিন্নি তার বাবার জিম্মায় থাকবে এবং মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর ২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের অবকাশকালীন চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন।
পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান মিন্নি।
এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী এ মামলায় চার্জশিট গ্রহণ করে পলাতক নয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়া চার্জ গঠনের জন্য আগামী ৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী মিন্নিসহ ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির।