কোনো গাড়ি সাতদিনের বেশি সময়ের জন্য রিকুইজিশন করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রোগী বহনকারী, পঙ্গু বা এয়ারপোর্টের বিদেশগামী যাত্রী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না। গাড়ি বিকুইজিশন নিয়ে জনস্বার্থে দায়ের করা রিটের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই দেয়া রায়ে মোট ১১ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি বুধবার প্রকাশিত হয়েছে।
রায় প্রদানকারী হাইকোর্টের বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর স্বাক্ষরের পর রায়ের র্পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
মনজিল মোরসেদ বলেন, এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে ১১ দফা গাইডলাইন অনুসরণ করতে বলেছেন আদালত। সেগুলো হলো-
১. ডিএমপি আইনে রিকুইজিশন করা গাড়ি শুধু জনস্বার্থে ব্যবহার হবে, কোনো ভাবে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে ৬০ দিনের মধ্যে তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার নির্দেশ হাইকোর্টের
২. ব্যক্তিগত, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রিকুইজিশন করার ক্ষেত্রে মালিককে কারণ উল্লেখ করে আগে নোটিশ দিতে হবে।
৩. গাড়ি যে উদ্দেশ্যে রিকুইজিশন করা হবে তার বাইরে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বা তাদের পরিবার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন না।
৪. কোনো গাড়ি সাতদিনের বেশি সময়ের জন্য রিকুইজিশন করা যাবে না।
৫. ডিএমপির মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে রিকুইজিশন করা গাড়ির ক্ষতিপূরণ এবং ডেইলি এলাউন্স নির্ধারণ করতে হবে।
৬. ১৫ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭. রিকুইজিশনে থাকার সময় কোনো গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৮. কর্তৃপক্ষ ডিএমপিকে এজন্য ফান্ড প্রদান করবে।
৯. রিকুইজিশনের বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০. রোগী বহনকারী, পঙ্গু বা এয়ারপোর্টের বিদেশগামী যাত্রী বহনকারী গাড়ি রিকুইজিশন করা যাবে না।
১১. রিকুইজিশন করা গাড়ির রেজিস্টার অনুসরণ করতে হবে। যেখানে বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
আরও পড়ুন: ভেজাল প্যারাসিটামলে মৃত্যু: ১০৪ শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ হাইকোর্টের
মনজিল মোরসেদ জানান, এই রায় হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এই গাইডলাইন বিজ্ঞপ্তি আকারে সংশ্লিষ্ট স্টেশনের কর্মকর্তাকে পাঠাতে ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
‘পুলিশের রিকুইজিশন বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে ২০১০ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। রিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ১০৩ (ক) ধারার অধীনে পুলিশের গাড়ি রিকুইজিশনের বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। এরপর ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ২৩ মে আদালত রুল জারি করেন। ওই রুলের ওপর দীর্ঘ শুনানি নিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে এবং মামলাটি চলমান রেখে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই রায় দেন হাইকোর্ট। যে রায়ের অনুলিপি বুধবার প্রকাশিত হয়।