সিরাজগঞ্জে অনুমোদনহীন ও অবৈধভাবে যত্রতত্র প্রায় দেড়শ’ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু রায়গঞ্জ উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে ৬৪টি ইটভাটা। এর মধ্যে ৩১টি ইটভাটার নেই কোনো অনুমোদন।
নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানোর ফলে গাছপালা উজাড় ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কর্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, রায়গঞ্জে প্রতিবছরই নতুন নতুন ভাটা তৈরি হচ্ছে। জেলার মোট ১৪০টি ইটভাটার ৬৪টিই গড়ে উঠেছে এখানে। আর পুরো জেলার ১৪০টির মধ্যে মাত্র ৪৬টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলো চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই।
এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইট পোড়ানোর লাইন্সেস অনেকের থাকলেও অনেক ইটভাটা মলিক তা বছর বছর নবায়ন করেন না।
নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটায় জ্বালানি হিসাবে কয়লা পোড়ানোর কথা থাকলেও ইটভাটার মালিক সমিতির দাবি, কয়লা সংকটের কারণে তারা জ্বালানি কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: ঝালকাঠিতে ইটভাটায় মাটিচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ করে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। এতে জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।
এছাড়া ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। হুমকির মুখে পড়ছে জীব-বৈচিত্র্য।
এদিকে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ইটভাটার লাইন্সেস অনেকের থাকলেও সবাই প্রতিবছর নবায়ন না করায় তা অনুমোদনহীন হয়ে যাওয়ার পরও তা অবৈধভাবে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া সরকারি নিয়মানুযায়ী ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর কথা থাকলেও অবাধে তারা কাঠ পোড়ায়।
কয়লা সংকটের কারণে তারা জ্বালানি কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি দাবি করেছেন।
তবে ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা সরকার বলেন, প্রতি রাউন্ড ইট পোড়াতে প্রচুর পরিমাণে কয়লা লাগে। বর্তমানে জোগান কম থাকায় টাকা দিয়েও কয়লা পাওয়া যায় না। আর কয়লার দাম বেড়েছে তিন গুণ। বাধ্য হয়েই ইট পোড়াতে কাঠের ব্যবহার করা হচ্ছে। মৌসুমের এই সময়ে আমরা প্রচুর পরিমাণে ইট তৈরি করি। তাই এই সময় জ্বালানির প্রয়োজন অনেক বেশি।
তিনি আরও বলেন, কয়লার দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। কয়লা বাজারে পাওয়া যায় না। এক মৌসুমে সাত থেকে আট লাখ ইট পোড়াতে প্রায় ১৩০ টন কয়লা লাগে। এক হাজার টন কয়লার দাম আগে ছিল ৯০ লাখ টাকা, এখন কিনতে হচ্ছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকায়।
উপজেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা দেওয়ান শহিদুজ্জামান জানান, তারা অভিযানে নামবেন। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ালেই জরিমানাসহ ইটভাটা বন্ধের সুপারিশ করবেন।
রায়গঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিল পারভেজ জানান, এরই মধ্যে তিনটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার রোধে মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে যারা শর্ত ভাঙবেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।
রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, নির্দিষ্ট তথ্য অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া বাকিদের বিরুদ্ধেও নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: কুষ্টিয়ায় ৭ অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দিলো আদালত
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মোবারক হোসেন বলেন, জেলার সব কয়টি উপজেলায় অনুমোদনহীন ও অবৈধ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নেয়া শুরু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে বুধবার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে একটি পত্র পাঠানো হয়েছে। ওই পত্রে অনুমোদনহীন ও অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটা কমিটি করতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মেজবাহুল আলম বলেন, সবকয়টি জেলার ইটভাটাগুলোর হালনাগাদ তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তবে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদেরকে আর ছাড়পত্র দেয়া হবে না।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা যে যাই বলুক না কেন আসল কথা হলো কয়লার দাম বৃদ্ধির অজুহাতে মালিকরা তাদের ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে ইচ্ছেমতো কাঠ পোড়ানো শুরু করেছে।
সেইসঙ্গে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ইট তৈরি করায় জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে।
সেইসঙ্গে ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।
তাছাড়া হুমকির মুখে পড়ছে জীব-বৈচিত্র্য।
আরও পড়ুন: দেশের সব অবৈধ ইটভাটা সাত দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ