সীমান্তে মৃত্যুর বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উদ্বেগ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে এ আশ্বাস দেয় বিএসএফ।
বিএসএফ আশ্বাস দিয়েছে যে নিরস্ত্র ও নিরপরাধ এবং মানবপাচারের শিকার সকলকে বিজিবির সদস্যদের হাতে সোপর্দ করা হবে।
এছাড়া, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্তে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালুর বিষয়ে সম্মত হয়েছে উভয় বাহিনী।
১৬-১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।
সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক মো. সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। বিএসএফের তরফ থেকে অংশ নেয় রাকেশ আস্তানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল।
আলোচনায় বিএসএফ এবং বিজিবি উভয়ই আন্তসীমান্ত অপরাধ কমিয়ে আনা এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে পারস্পারিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব দেয়।
প্রস্তাবগুলো:
ভারতের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কোডিন জাতীয় কাশির সিরাপ চোরাচালানের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক প্রচারণা শুরু করেছে বিএসএফ। আন্তসীমান্ত ওষুধ ও মাদক চোরাচালান হ্রাস করার প্রচেষ্টাও দ্বিগুণ করবে তারা।
মাদক চোরাচালান হ্রাসে বিএসএফের চলমান সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে বিজিবি।
উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী গবাদি পশু পাচারকারীদের দ্বারা তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংস হামলার বিষয়টি স্বীকার করেছে এবং চোরাচালান সিন্ডিকেট ও পাচারকারীদের তালিকার ওপর গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে সম্মত হয়েছে।
উভয় বাহিনী একমত হয়েছে যে সীমান্তে চোরাচালান সিন্ডিকেটগুলো যে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করছে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে চোরাচালান প্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করতে হবে।
এছাড়া, পাচারকারীদের সিন্ডিকেট এবং তালিকার বিষয়ে তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় মূল বিষয় উল্লেখ করে, এ জন্য উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নোডাল কর্মকর্তা নির্বাচন করবে বলে মত দেয়া হয়েছে।
বিএসএফের মহাপরিচালক গরু পাচার বা চোরাচালান প্রবণ অঞ্চলে যৌথ টহল দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে সব ধরনের পাচারের ঝুঁকি কমে যায়।
মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয়তা নির্ধারণে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে বিএসএফ।
সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য দৈনিক ভ্রমণ পাসের জন্য উভয় বাহিনী এ ধরনের ভ্রমণ সহজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করে একটি প্রক্রিয়া তৈরির বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতির পুনরাবৃত্তি করে, বিজিবি সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য প্রদানের অনুরোধ করেছে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর (যদি থাকে) বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা করার প্রস্তাব দিয়েছে।
যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদন অনুযায়ী বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নদী তীরের সমস্ত সুরক্ষা কাজ শেষ করতে সহযোগিতার জন্য ঐকমত্য হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বন্ধ হয়ে গেলেও, উভয় বাহিনীর মহাপরিচালক পারস্পরিক আস্থা তৈরি এবং সীমান্তে অপরাধ হ্রাস করতে আবারও সমন্বিত টহল চালু করতে সম্মত হন।
চলমান মহামারির প্রভাব হ্রাসের পরে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ব্যবস্থা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সীমান্তে নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক হত্যার ঘটনা শূন্যে নামাতে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যহত রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে বিজিবি এবং বিএসএফ।