বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ বিমানযোগে তারা দেশে ফেরেন। এ নিয়ে এ বছরের প্রথম ১৬ দিনে এক হাজার ৬১০ জন বাংলাদেশি সৌদি থেকে দেশে ফিরলেন।
বরাবরের মতো এবারও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ফেরত আসাদের মাঝে জরুরি সহায়তা প্রদান করেছে।
ফেরত আসা সিলেট জেলার তালেব (৩০) মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন না। রাতেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পাঁচ বছর আগে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরব যান তালেব। কিন্তু গত দুই মাস আগে সেখানে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
এদিকে মাত্র দুই মাস আগে সৌদি আরব যাওয়া নোয়াখালীর আজিম হোসেন জানান, পাসপোর্টে তিন মাসের ভিসা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
তিনি বলেন, বাজার করার জন্য মার্কেটে যাবার পথে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের সাথে নিয়োগকর্তা (কফিল) কথা বলার পরও তাকে দেশে পাঠানো হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জের রুহুল আমিন,কুমিল্লার ফিরোজ হোসেন ও মানিক, শরিয়তপুরের মিলন, যশোরের মোসলেম উদ্দিন, বগুড়ার মেহেদি হাসান, গাজীপুরের রাজিবসহ ১০৯ বাংলাদেশির বেশিরভাগেরই এমন অবস্থা।
দেশে ফেরা কর্মীদের অভিযোগ, আকামা তৈরির জন্য কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা প্রদান করলেও কফিল আকামা তৈরি করে দেয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কফিলের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা গ্রেপ্তার কর্মীদের দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না।
ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, ২০১৯ সালে ২৫ হাজার ৭৮৯ বাংলাদেশিকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নতুন বছরের শুরুর ১৬ দিনে দেশটি থেকে এক হাজার ৬১০ জন বাংলাদেশি ফিরলেন। ফেরত আসাদের বর্ণনা প্রায় একইরকম। প্রায় সবাই খালি হাতে ফিরেছেন। কয়েকমাস আগে গিয়েছিলেন এমন লোকও আছেন। তারা সবাই ভবিষ্যত নিয়ে এখন চরম দুশ্চিন্তায়।
গত বছরের পুরো পরিসংখ্যান দিয়ে শরিফুল হাসান জানান, প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্যানুযায়ী ২০১৯ সালে মোট ৬৪ হাজার ৬৩৮ কর্মী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২৫ হাজার ৭৮৯ জন, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৩৮৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ছয় হাজার ১১৭ জন, ওমান থেকে সাত হাজার ৩৬৬ জন, মালদ্বীপ থেকে দুই হাজার ৫২৫ জন, কাতার থেকে দুই হাজার ১২ জন, বাহরাইন থেকে এক হাজার ৪৪৮ জন ও কুয়েত থেকে ৪৭৯ জন শূন্য হাতে দেশে ফিরেছেন।
তিনি বলেন, ফেরত আসা প্রবাসীদের আমরা শুধু বিমানবন্দরে সহায়তা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করছি না, তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে সেজন্য কাউন্সিলিং, দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও আর্থিকভাবেও পাশে থাকতে চাই। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজটি করতে হবে।
পাশাপাশি এভাবে যেন কাউকে শূন্য হাতে ফিরতে না হয় সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দূতাবাস ও সরকারকেও বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণা বন্ধ করা উচিৎ।