মঙ্গলবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে ও দিবাগত রাত দেড়টায় সৌদি এয়ারলাইন্সের এসভি ৮০৪ ও এসভি ৮০২ দুটি বিমান করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি থেকে পাঁচ নারীসহ ১৩২ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এ নিয়ে গত সাত দিনে ৪০ নারীসহ ৭৬৭ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন।
বরাবরের মতো গতকালও ফেরত আসাদের মাঝে প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে খাবার-পানিসহ নিরাপদে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়া বিদেশ থেকে ফেরা মানুষদের কাউন্সিলিং ও আর্থিকভাবে পুনরেকত্রীকরণের কর্মসূচি নিয়েছে ব্র্যাক।
মঙ্গলবার ফেরত আসাদের একজন নুর বেগম (৪০) জানান, ২০১৯ সনের এপ্রিল মাসে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেখানে নিয়োগকর্তার নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমে। তাকে ঠিকমত খাবার ও নিয়মিত বেতন দেয়া হতো না। বেতন চাইতে গেলে তার ওপর নির্যাতন চালানো হতো।
একই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফিরেছেন যশোর জেলার খাদিজা বেগম, নারায়নগঞ্জের সেফালী বেগম, ঝিনাইদহের শিল্পি খাতুন ও ঢাকার সুবর্ণা বেগম।
সৌদি আরবের ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে ১৬ দিন থেকে দেশে ফেরা রাজবাড়ীর রউছ শেখ জানান, মাত্র এক বছর আগে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। কর্মস্থল থেকে রুমে ফেরার পথে পুলিশ আটক করলে তিনি পুলিশকে আকামা (কাজের বৈধ অনুমতির সনদ) প্রদান করেন। কিন্তু কিছুতেই সমাধান হয়নি, দায়িত্ব নেয়নি নিয়োগকর্তা। সে কারণে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে হয় তাকে।
একই সাথে দেশে ফিরেছেন নোয়াখালীর ফারুক, কুমিল্লার সাইফুল, চট্টগ্রামের তাসলিম আরিফ, পাবনার জুয়েল শেখসহ ১৩২ বাংলাদেশি।
দেশে ফেরা অনেক যুবকের অভিযোগ, আকামা তৈরির জন্য কফিলকে (নিয়োগকর্তা) টাকা প্রদান করলেও কফিল আকামা তৈরি করে দেয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কফিলের সাথে যোগাযোগ করলেও গ্রেপ্তারকৃত কর্মীর দায়-দায়িত্ব নিচ্ছে না। বরং কফিল প্রশাসনকে ক্রুশ (ভিসা বাতিল) দিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিতে বলেন।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান জানান, নতুন বছরের শুরুতেই সাত দিনে ফিরলেন ৭৬৭ জন। এভাবে ব্যর্থ হয়ে যারা ফিরছেন তাদের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিৎ। আর এভাবে যেন কাউকে প্রতারিত না হতে হয়, যে কাজে গিয়েছেন সেই কাজই যেন পান এবং খরচের টাকাটা তুলে ভাগ্য ফেরাতে পারেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে রাষ্ট্র ও দূতাবাসকে। এক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সিকেই সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে।