বরিশাল মহানগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার পরিবার বুধবার (২৮ জুন) ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন। আজ সকালে অর্ধশতাধিক মসজিদে ঈদুল আজহার আগাম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অগ্রীম ঈদ উদযাপনকারীরা চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহাগীরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী।
পৃথিবীর কোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাসহ যাবতীয় ধর্মীয় আচার পালন করেন।
বরিশাল নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠী হাজিবাড়ির জাহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আমীর হোসেন জানান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাগরদী, তাজকাঠীসহ আশপাশের প্রায় ৫০০ পরিবার সৌদির সঙ্গে মিল রেখে ঈদ করেছি।
আমরা হাজিবাড়ির জাহাগিরিয়া শাহসুফি মমতাজিয়া জামে মসজিদে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের নামাজ পড়েছি। আমরা সবাই চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহগিরিয়া শাহসুফী মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী।
বরিশাল নগরীসহ জেলার ৫০টি মসজিদে চন্দনাইশ দরবারের অনুসারীরা বুধবার ঈদের নামাজ পড়েছেন বলে জানান আমির হোসেন।
আরও পড়ুন: বিভিন্ন গ্রামে আজ ঈদ উদযাপন
নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিনাফুলিয়ার চৌধুরীবাড়ি শাহসুফী মমতাজিয়া জামে মসজিদের সভাপতি মমিন উদ্দিন কালু জানান, এই ওয়ার্ডের প্রায় ১ হাজার পরিবার অগ্রীম ঈদ উদযাপন করেছেন। নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড ও দপদপিয়া এলাকারও পাঁচশতাধিক পরিবার ঈদ উদযাপন করেছেন।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরা গ্রামের আব্দুর রশীদ শিকদার স্মৃতি জামে মসজিদের সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, বাবুগঞ্জের খানপুরা, কেদারপুর, মাধবপাশাসহ ৫-৬টি গ্রামের একহাজারের বেশি পরিবারে ঈদ উদযাপিত হয়েছে।
এছাড়াও বাবুগঞ্জের মাধবপাশা দুয়ারীবাড়ি জামে মসজিদে আরেকটি ঈদের জামাত হয়েছে।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশের জাহগিরিয়া শাহসুফী মমতাজিয়া দরবার শরীফের অনুসারী মমিন উদ্দিন কালু বলেন, জেলার মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় এবং সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন, পতাং, লাহারহাট গ্রামের চন্দনাইশ দরবারের প্রায় দুই হাজার অনুসারী রয়েছেন।
তারাও বুধবার ঈদুল আযহা উদ্যাপন করছেন।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দিনাজপুর সদর এবং চিরিরবন্দরসহ ৬টি উপজেলার কয়েক গ্রামের মানুষ ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেছেন।
দিনাজপুরের পৃথক জামাতে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন প্রায় ২ হাজার অনুসারী পরিবার। পরে পশু কোরবানি দেন তারা।
দিনাজপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নামাজে ইমামতি করেন চিরিরবন্দরের রাবার ড্যাম জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক।
এছাড়াও চিরিরবন্দরের সাইতাড়া রাবার ড্যাম কাহারোলের জয়নন্দ গ্রামে, ১৩ মাইল গড়েয়া বোচাগঞ্জের তেতরায়, বিরলের ভাড়াডাঙ্গী গ্রামে এবং বিরামপুরের বিনাইল ইউনিয়নের আয়রা বাজার জামে মসজিদ জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি মির্জাপুর জামে মসজিদে কয়েকশ’পরিবারের মানুষ ঈদুল আযহা'র নামাজ আদায় করেছেন।
পরে সামর্থ অনুযায়ী পশু কোরবানির দেন তারা।
এছাড়া, দিনাজপুরের বিরামপুরে দুইটি ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের মুসল্লি আজ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। দুই জামাতে পুরুষ মুসল্লির পাশাপাশি নারী মুসল্লিরাও নামাজ আদায় করেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিরামপুর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বুধবার (২৮ জুন) সকাল সাড়ে সাতটায় উপজেলার জোতবানি ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর মসজিদে এবং একই সময়ে আয়ড়া মাদরাসা মসজিদে জামাত দুটি অনুষ্ঠিত হয়। দুই জামাতে ১০ গ্রামের ১৪০ মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।
খয়ের বাড়ি জামে মসজিদে মো. দেলোয়ার হোসেন কাজী এবং আয়ড়া মাদরাসা মসজিদে আল আমিন জামাতের ইমামতি করেন।
সরেজমিনে উপজেলার আয়ড়া মাদ্রাসা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সময় হওয়ার আগেই দূর-দূরান্তের গ্রামগুলো থেকে কেউ ভ্যানে আবার কেউ সাইকেল বা মোটরসাইকেলে একত্রিত হচ্ছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিরামপুর থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে আটটায় ওই এলাকার মাদরাসা মাঠে আল আমিনের ইমামতিতে নামাজ শুরু হয়।
সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার বিষয়ে জানতে চাইলে খয়ের বাড়ি জামাতের ইমাম মো. দোলোয়ার হোসেন কাজি বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের সময়ের পার্থক্য মাত্র তিন ঘণ্টা। এই তিন ঘণ্টার ব্যবধানে দিনের পরিবর্তন হয় না। তাই এই নামাজ আদায় করা।
ঈমাম দেলোয়র হোসেন বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এভাবে নামাজ আদায়ের পরিকল্পনা থাকলেও ২০১৩ সাল থেকে আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নামাজ আদায় করছি।
এদিকে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত বলেন, বিরামপুর উপজেলায় জোতবানি ও বিনাইল দুটি ইউনিয়নে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে যেকোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুইটি জামায়াতে ১৪০ জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।