ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা এক মামলায় ১২ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাকে ২০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২২ জুন এ আদেশ দেন। এ আদেশের বিষয়টি সোমবার রফিকুল আমীনের আইনজীবী উজ্জ্বল কুমার ভৌমিক সাংবাদিকদের জানান।
আইনজীবী উজ্জ্বল কুমার ভৌমিক বলেন, আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাঁর ক্ষেত্রে ২০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিচারিক আদালতে থাকা মামলার রেকর্ড (নথি) তলব করা হয়েছে।
এর আগে গত ১২ মে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের ওই মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম রায় দেন। বিচারিক আদালতের রায়ে ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমীনসহ ৪৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং তাদের দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দেন। এর মধ্যে রফিকুলকে ১২ বছরের কারাদণ্ড ও ২০০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ১৬ জুন হাইকোর্টে আপিল করেন রফিকুল আমীন।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই দুদকের উপ পরিচালক মো. মোজাহার আলী সরদার ও সহকারী পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসিটিনির কর্তাব্যক্তিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাতের দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় মোট চার হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মে দুদক আদালতে উভয় মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এর মধ্যে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জন এবং ডেসটিনি ট্রি প্লানটেশন লিমিটেডে দুর্নীতির মামলার ১৯ জনকে আসামি করা হয়। হারুন-অর-রশিদ ও রফিকুল আমিন দুই মামলাতেই আসামি। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাত ও পাচারের মামলার বিচার শেষে গত ১২ মে রায় দেয়া হয়েছে। অন্য মামলাটি বিচারাধীন।
আরও পড়ুন: হারুনসহ ডেসটিনির ৪৫ জনের সাজা বাড়াতে হাইকোর্টে দুদকের আবেদন
রায়ে ৪৬ সাজাপ্রাপ্তের মধ্যে রফিকুল আমিন, মোহাম্মদ হোসেন, এম হারুন-অর-রশীদ, জেসমিন আক্তার, জিয়াউল হক ও সাইফুল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন। আসামিদের মধ্যে দিদারুল আলমের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণার পরই তিনি আদালত থেকে বাসায় চলে যান। এছাড়া মামলার বাকি ৩৯ আসামি পলাতক।
পলাতক ৩৯ আসামি হচ্ছেন- ডেসটিনির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ সানী, ফারাহ দীবা, ইঞ্জিনিয়ার শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জমশেদ আরা চৌধুরী, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন সুমন, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, মো. সাইদুল ইসলাম খান রুবেল, মজিবর রহমান, সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, ড. এম হায়দারুজ্জামান, মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, কাজী ফজলুল করিম, সফিকুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, ওমর ফারুক, সিকদার কবিরুল ইসলাম ও সুনীল বরুন কর্মকর।
পলাতক আসামির তালিকায় আরও আছেন পরিচালক ফরিদ আক্তার, এসএম শহিদুজ্জামান চয়ন, আব্দুর রহমান তপন, মেজর সাকিবুজ্জামান খান, এসএম আহসানুল কবির বিপ্লব, এএইচএম আতাউর রহমান, জিএম গোলাম কিবরিয়া মিল্টন, আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, একেএম সফিউল্লাহ, দেলোয়ার হোসেন, সফিকুল হক ও মোল্লা আল আমিন।
আরও পড়ুন: ডেসটিনির মামলায় পলাতক ৩৯ আসামিকে গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারির নির্দেশ