গত বছরের সহিংসতার ক্ষত নিয়েই এ বছর কড়া নিরাপত্তায় কুমিল্লায় শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।
কর্মকর্তা বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে কুমিল্লায় এ বছর কঠোর নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহন করেছে প্রশাসন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান জানান, তারা পূজা মণ্ডপগুলো সার্বক্ষণিক পাহারা দিতে আনসার সদস্য মোতায়েন করেছেন এবং অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা পূজামণ্ডপে টহল দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, জেলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অস্থিতিশীল করার যে কোনো অপচেষ্টা তারা প্রতিহত করবে।
এ বছরও নানুয়া দিঘীর পাড়ের মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর দুর্গাপূজার সময় যেখানে একটি পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ পাওয়াকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ছড়ায়।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় নৌকাডুবি: জেলায় অনাড়ম্বরভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের সিদ্ধান্ত
পুলিশের বিবৃতিতে জানা যায়, গত বছরের ১৩ অক্টোবর একজন মুসলিম ব্যক্তি কুমিল্লার একটি মণ্ডপে একটি মূর্তির কোলে কুরআনের একটি অনুলিপি রেখেছিলেন বলে জানা গেছে এবং আরেকজন মুসলিম ব্যক্তি ৯৯৯ হেল্পলাইনে কল করে ‘পবিত্র গ্রন্থের পবিত্রতা লঙ্ঘনের’ অভিযোগ জানায়।
গুজব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনতা মণ্ডপে আক্রমণ করে, যার ফলে পরর্তীতে জেলা ও জেলার বাইরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ায়।
এ সহিংসতায় সারা দেশে অন্তত আটজন নিহত হয়েছে।
কুমিল্লার ঘটনা যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও রংপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটে।
সহিংসতা দমন করতে পুলিশকে মুসলিম জনতার ওপর গুলি চালাতে হয়েছিল, এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছিল।
গত সপ্তাহে জেলা প্রশাসক কুমিল্লা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা ও কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে দুর্গাপূজা উদযাপনের পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য বৈঠক করেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে- যেখান থেকে পুরো জেলার পূজা মণ্ডপের যাবতীয় তথ্য পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মন্দির ও মণ্ডপের তালিকা করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুল মান্নান বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যেন গুজব ছড়াতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার কেউ যেন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ধর্মকে ব্যবহার না করতে পারে সে দিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে।’
এসপি বলেন, ‘কুমিল্লার যে সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে এই দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ উদযাপনের মাধ্যমে আমরা সেই প্রমাণ দিতে চাই।’
কুমিল্লা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল পাল জানান, এ বছর জেলায় ৭৯৪টি পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় এবার পূজা সুষ্ঠুভাবে উদযাপন করা হবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি তাপস বকশী।
তিনি বলেন,‘সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আমরা আশাবাদী। ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপের তালিকা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। যাতে তারা পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে।’
কুমিল্লায় সহিংসতার ঘটনায় জেলায় ১২টি মামলা হয়েছে। পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এবং অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সহ বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মামলাগুলোর তদন্তে নিযুক্ত রয়েছে। কিন্তু তদন্তের ধীরগতিতে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এ বছর শনিবার (১ অক্টোবর) সারাদেশের মন্দিরে মহা ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা।
আগামী ৫ অক্টোবর দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব।
বাংলাদেশের ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের প্রায় ৮ শতাংশ হিন্দু।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজা: হিলি স্থলবন্দরে ৮দিন আমদানি-রপ্তানি বন্ধ