রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ কমে যেতে পারে।
এতে আরও বলা হয়েছে, অভিবাসী শ্রমিকরা ২০২২ সালের জানুয়ারি-নভেম্বর মাসে ১৯ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বাড়িতে পাঠিয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বছরের শেষে রেমিটেন্স আয় দাঁড়াবে ২১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসন ২০২২: অর্জন ও চ্যালেঞ্জ’-শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে আরও ধারণা করা হয়েছে যে চলতি বছরে দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ৮১ দশমিক ৮৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
এতে আরও বলা হয়, বছরের শেষে কর্মসংস্থান ১ দশমিক ১ মিলিয়নেরও বেশি হবে।
প্রতিবেদনটি উপস্থাপনকারী আরএমএমআরইউ-এর চেয়ার প্রফেসর তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘রেমিটেন্স প্রবাহের হ্রাস বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। ব্যাংকে কম লাভের কারণে শ্রমিকরা হুন্ডির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও শ্রমিকরা সাধারণত তাদের অভিবাসনের প্রথম বছরে রেমিটেন্স পাঠাতে পারে না। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মী বিদেশে যাওয়ার সময় প্রতারিত হন এবং তারা সঠিক চাকরি পান না। তাছাড়া তাদের অনেকেই বাড়ি থেকে ফেরার জন্য অর্থের ব্যবস্থা করেন।’
প্রফেসর তাসনিম সিদ্দিকী নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার এবং কর্মীদের সরকারী চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করার জন্য প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রেরণকারীদের জন্য প্রণোদনা ১০ শতাংশ হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি পোশাক প্রস্তুতকারীরা আকর্ষণীয় নগদ প্রণোদনা সহায়তা পায়, তবে অভিবাসী শ্রমিকরা কেন নয়?’
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালে দক্ষ শ্রমিক অভিবাসন কমেছে। চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট বহির্গামী কর্মীদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ দক্ষ শ্রমিক ছিল; যেখানে ২০২১ সালে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ দক্ষ কর্মী বিদেশে গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহিরাগত বাংলাদেশিদের মধ্যে পেশাদারের সংখ্যা কম। তবে গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে।
এই বছর ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ০ দশমিক ৩৩ শতাংশ পেশাদার চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন। ২০২১ সালে পেশাদারদের সংখ্যা শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ ছিল।
চলতি বছরের জানুয়ারি-নভেম্বরে প্রায় ৯৯ হাজার ৬৮৪ জন নারী চাকরি নিয়ে বিদেশে গেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বহির্গমনের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালে নারীদের অভিবাসন আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ট্রাফিকিং ইন পারসন্স রিপোর্ট ২০২২-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আরএমএমআরইউ বলেছে যে মাইগ্রেশন খরচ কিছুটা কমেছে, তবে এটি এখনও বাংলাদেশি অভিবাসীদের খরচ দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ।
এটি আরও বলেছে যে যদিও বিদায়ী বছরে মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হওয়া একটি বড় উন্নয়ন ছিল, তবু শ্রমিকরা এখনও অনৈতিক অভিবাসন খরচের শিকার হচ্ছে। ‘নিয়োগকারীদের একটি অংশ এই অনৈতিক অনুশীলন চালিয়েই যাচ্ছে।’