উচ্চ আদালতের সঙ্গে পুলিশ সুপার যোগাযোগ (ফোন) করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, বেশি স্বচ্ছতার জন্য যোগাযোগ করে? এটি পেশাগত অসদাচরণ।
সোমবার মানিকগঞ্জ সদরের কৈতরা গ্রামের মো. রুবেল হত্যা মামলাটি পুনরায় তদন্তের অগ্রগতি-বিষয়ক শুনানিকালে বিচারপতি মো. বদরুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
পরে তদন্ত কর্মকর্তার সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আগামী ১৭ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়ে এ হত্যা মামলাটির পুনঃতদন্তের অগ্রগতি জানাতে বলেছেন।
‘লাশ উদ্ধার থেকে অভিযোগপত্র, ৪২ ঘণ্টার অবিশ্বাস্য তদন্ত’ শিরোনামে গত ২ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
আরও পড়ুন: এবি ব্যাংকে ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের
প্রতিবেদনটি যুক্ত করে মামলার নথি তলবের নির্দেশনা চেয়ে আসামি সোহেল ওরফে নুরুন্নবী ও বাদী চম্পা আক্তার ওরফে অঞ্জনা গত ৫ মার্চ হাইকোর্টে আবেদন করেন।
সোহেল ও চম্পা সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন। আর নিহত রুবেল হলেন সোহেলের ভগ্নিপতি।
আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৪ মার্চ হাইকোর্ট রুল দিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমানকে কেস ডকেটসহ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
সে অনুসারে কেস ডকেটসহ তিনি গত ৩ এপ্রিল আদালতে হাজির হন। ওই দিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দেন।
পুলিশ সুপারের নিচে নন-পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এমন একজন কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
অধিকতর তদন্তের সময় চারটি বিষয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে বলা হয়।
এর মধ্যে বাদী যখন সংশ্লিষ্ট থানায় এজাহার করেন, তখন বর্তমান অভিযুক্তকে (সোহেল) জড়িত করে অথবা এজাহারে বাদী সই করেছিলেন কি না, নির্যাতন বা ভয়ভীতি দেখিয়ে সোহেলের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে কি না, তা-ও তদন্ত করতে বলা হয়।
হাইকোর্ট শুনানির জন্য ৫ জুন পরবর্তী দিন রাখেন।
এদিকে হাইকোর্টের আদেশে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মানিকগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের এ নির্দেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।
এর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ৬ এপ্রিল ওই সাময়িক বরখস্তের আদেশ অংশটুকু আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন। তবে হত্যা মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করতে হাইকোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা বহাল থাকে।
আরও পড়ুন: শ্রমিকদের গ্রামীণ কল্যাণের লভ্যাংশ দেওয়ার রায়ে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা
আগের ধারাবাহিকতায় গতকাল বিষয়টি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী দেলোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পি।
শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বলেন, হত্যা মামলাটির তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। কয়েকজন সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
মামলার বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থলের ডিজিটাল এভিডেন্স (সেল, কললিস্ট ইত্যাদি) সংগ্রহ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তসহ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মামলার তদন্তে আরও সময়ের প্রয়োজন।
এছাড়া তদন্তের জন্য আরও ৯০ কার্যদিবস সময় বর্ধিত করার আরজি জানান তিনি।
আদালত বলেন, অধিক তদন্তের জন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আরও ৯০ দিন চাচ্ছেন। পুলিশ সুপার ফোন কল করেন। আদালতের জন্য এটি বিব্রতকর।
উনি কি এটি করতে পারেন?
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বলেন, কোর্টের মর্যাদা সবচেয়ে বড়। তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ ও আদালতের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। আদালতের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, তা বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশনে রয়েছে।
কোর্টের মর্যাদা সমুন্নত না রাখলে আমাদের মূল্যায়নও থাকবে না। পুলিশ সুপার কোর্টকে ফোন করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছেন। আদালতের উদ্বেগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জির উদ্দেশে আদালত বলেন, ২৪ ঘণ্টায় এক তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে দেন। আদালত ৬০ দিন সময় দিলেও অধিকতর তদন্তের প্রতিবেদন দিতে পারলেন না।
এছাড়া শুনানি শেষে হাইকোর্ট ১৭ জুলাই এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ধার্য করেন।
আরও পড়ুন: যমুনা নদী ছোট করার চিন্তা,প্রকল্পের সব নথি হাইকোর্টে তলব