সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে যে চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা হবে, যার ফলে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়বে।
এতে বলা হয়েছে, ‘সরকার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫৪ হাজার ৫০১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে ৭৫ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা হয়েছে, এটি সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।’
সিপিডি ইঙ্গিত দিয়েছে যে সরকার দেশীয় উৎস (ব্যাংক) থেকে ঋণ গ্রহণ করলে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতিমূলক ব্যবস্থা তৈরি হবে। বরং এটি পরামর্শ দেয় যে সরকারের উচিত বিদেশি অর্থায়নে বাজেটের সহায়তা জোগাড় করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
শনিবার ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ফাহমিদা খাতুন বাংলাদেশের অর্থনীতির থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন, এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তৃতীয় পর্যালোচনা।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিপিডি জানিয়েছে, বিপিসি’র গত সাত বছরে অর্থবছর ২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট মুনাফা ছিল প্রায় ৪৩ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা। আয়কর হিসাবে সাত হাজার ৭২৭ কোটি টাকা দেওয়ার পরে বিপিসির নিট মুনাফা ছিল ৩৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা।
এতে বলা হয়েছে, একচেটিয়া ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দেশের নাগরিকদের জরিমানা করে ক্ষতিপূরণ লাভ করা ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সরকারকে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে, যেখানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী কাজ করছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনী বছরের বাজেটের আগে মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব ঘাটতি ও ডলার সংকট অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ
থিঙ্ক ট্যাঙ্কটি বলেছে যে ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সৌদি আরব থেকে দেশে প্রায় তিন দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল, কিন্তু চলতি অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স কমে তিন দশমিক ০৪ বিলিয়ন হয়েছে।
সিপিডি সন্দেহ করছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের আকস্মিক বৃদ্ধির কারণে বাণিজ্যভিত্তিক মানি লন্ডারিংয়ের বিভিন্ন আকারে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পাঠানো চোরাচালানকৃত অর্থের পুনর্ব্যবহার হচ্ছে।
এটি দাম কমানোর জন্য সাময়িকভাবে স্বস্তি হিসাবে সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংও প্রয়োজন।
সিপিডির দৃষ্টিতে দরিদ্রদের সরাসরি সহায়তার সুযোগ বাড়ানো দরকার। সঠিক মানুষ পাচ্ছে কিনা তাও নিশ্চিত করতে হবে।
এটি উল্লেখ করেছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ইতিবাচক নয় এবং লক্ষ্যমাত্রার কম হচ্ছে। মে ও জুন মাসে (চলতি অর্থবছরের শেষ দুই মাস) তা ৪১ শতাংশ বাড়াতে হবে, যা খুবই কঠিন।
বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক ডা. মুস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক অধ্যাপক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।
আরও পড়ুন: আসন্ন বাজেটে ওয়াশ খাতের বরাদ্দে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান