১৭ জুলাই ‘এমআর-৯: ডু অর ডাই’ এর পোস্টারের দর্শনটা মাসুদ রানার ভক্তদের হৈচৈটাকে যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কেননা পোস্টার প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করা হয়েছে চলচ্চিত্র মুক্তির চূড়ান্ত দিনক্ষণ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ২৫ আগস্ট শুক্রবার বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেতে চলেছে মাসুদ রানা চরিত্রের চিত্রায়ন চলচ্চিত্র এমআর-৯। একদিকে হাজারও অপেক্ষার অবসান ঘটলেও, অন্যদিকে শুরু হয়ে গেছে চলচ্চিত্র মুক্তির দিন গণনা। চলুন, বহু প্রতীক্ষিত এই চলচ্চিত্রটির বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মাসুদ রানা কে?
চলচ্চিত্রের শুটিং-এর ঘন্টা বাজার আগ থেকেই মাসুদ রানা হিসেবে এবিএম সুমনের নামটা ছড়িয়ে পড়ে সবার মুখে মুখে। অবশ্য দুর্ধর্ষ গুপ্তচরের চরিত্রটিকে দৃশ্যায়নের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছিল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া। ‘ধ্বংস পাহাড়’ বইয়ের স্বত্বও তারা কিনে ফেলে কাজী আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র বাছাইয়ের ভার পরে স্বয়ং লেখকের ওপর। আগে থেকে বাছাই কয়েকজন মডেল ও অভিনেতার ছবি দেখে চূড়ান্তভাবে সুমনকে নির্বাচন করেন মাসুদ রানার স্রষ্টা।
গ্ল্যামার জগতে সুমনের শুরুটা ছিল মডেলিং-এর মাধ্যমে। অভিনয় জগতে তার অভিষেক ঘটে ২০১৩ সালে ‘মেঘের কোলে রোদ’ টেলিফিল্ম দিয়ে। তার অভিনীত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি ২০১৫ সালের শফিকুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘অচেনা হৃদয়’।
তবে তিনি আলোচনায় আসেন ২০১৭ সালের সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র ‘ঢাকা অ্যাটাক’-এর মাধ্যমে। সেখানে তার সোয়াট নেতা আশফাক চরিত্রটি দর্শক ও সমালোচক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিলো।
আরও পড়ুন: সে খুবই চতুর কিন্তু একজন ফ্যামিলি ম্যান: নতুন চরিত্র সম্পর্কে আফরান নিশো
পর্দার পেছনের মানুষেরা
এমআর-৯ চলচ্চিত্রের নির্মাতা আসিফ আকবর
এককভাবে পরিচালনা ছাড়াও এমআর-৯-এর চিত্রনাট্য, সম্পাদনা এবং প্রযোজনা - প্রতিটি গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখেছেন যে মানুষটি তার নাম আসিফ আকবর। বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত (খুলনা) হলেও তার বেড়ে ওঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো রাজ্যের ক্লিভল্যান্ড শহরে।
তিনি তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেন ২০০৭ সালে। ‘মাই ফরেন দেশ’ শিরোনামের ছবিটি ২০০৮-এর ডিসেম্বরে নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ও ভিডিও উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ছবিটির নির্মাণকালে তিনি তার হাইস্কুল শেষ করে হলিউডের স্বনামধন্য চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান কলাম্বিয়া কলেজে স্নাতক শুরু করেন। অতঃপর ২০১১ সালে সেখান থেকে চারুকলায় সিনেমা এবং টেলিভিশন নিয়ে স্নাতক শেষ করেন।
বিগত ১২ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি অনেকগুলো ফিচার ফিল্ম, মূলধারার মিউজিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন, শর্ট ফিল্ম, তথ্যচিত্র, এবং টিভি শো নিয়ে কাজ করেছেন। তন্মধ্যে তথ্যচিত্র ‘টপ প্রায়োরিটি: দ্য টেরর উইদিন’ ২০১২ সালের অস্কার মনোনয়নের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল।
বাবা এনায়েত আকবর মিলনের সঙ্গে তার প্রথম প্রযোজিত বাংলাদেশি বাণিজ্যিক ছবি ‘অচেনা হৃদয়’। ২০১৫ সালে এটি বাংলাদেশ সহ আমেরিকার মূলধারার প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি পায়। একই বছরে ইতালির মিলানে বিশ্ব সিনেমার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র নির্মাতা উৎসবে তার পরিচালিত ছবি ‘স্মোক ফিল্ড লাঙ্স’ সেরা পুরস্কার জিতে নেয়। বর্তমানে তিনি তার নতুন প্রজেক্ট ‘বোনইয়ার্ড’ নিয়ে কাজ করছেন। মুভিটিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা মেল গিবসন।
আরও পড়ুন: চলচ্চিত্রে এবার যারা সরকারি অনুদান পেলেন
এমআর-৯ ছবির অন্যান্য নির্মাণ শিল্পীরা
কাজী আনোয়ার হোসেনের ‘ধ্বংস পাহাড়’-এর ওপর ভিত্তি করে রচিত এমআর-৯-এর চিত্রনাট্যে আসিফের সহ-লেখকরা ছিলেন আবদুল আজিজ ও নাজিম উদ দৌলা। সঙ্গীত ও স্কোরের দায়িত্বে ছিলেন ভারতীয় সঙ্গীতজ্ঞ রিকি কেজ, যিনি সঙ্গীতের জন্য তিনবার গ্র্যামি পুরস্কার জিতেছেন। চিত্রগ্রহণে ছিলেন আমেরিকান পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক মার্ক ডেভিড। সার্বিক সম্পাদনার কাজ আসিফ নিজেই করেছেন।
৮৩ কোটি টাকা বাজেটের ছবিটি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ ও আমেরিকার যৌথ প্রযোজনায়। প্রযোজনা গ্রুপে আসিফের পাশাপাশি ছিলেন আল ব্রাভো, হেমডি কিওয়ানুকা, কলিন বেট্স, ফিলিপ ট্যান, এবং আব্দুল আজিজ। নির্বাহী প্রযোজনায় ছিলেন পিটার নগুয়েন, নিকো ফস্টার, ফিলিপ বি গোল্ডফাইন, এবং এডুয়ার্ড ওসিপভ।
জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে যে চলচ্চিত্র নির্মাণ সংস্থাগুলো যৌথভাবে কাজ করেছে সেগুলো হলো- আল ব্রাভো ফিল্মস, ফিল্ম পোস্ট, চেসিং বাটারফ্লাই পিকচার, এবং এমআর-৯ ফিল্মস। জাজের পাশাপাশি পরিবেশনায় ছিলো অ্যাভেইল ইন্টারটেইনমেন্ট ও স্বপ্না স্কেয়ারক্রো। কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পোস্টার প্রদর্শনের পর থেকে প্রচারনায় যোগ দেয় প্রিমিয়ার ইন্টারটেইনমেন্ট।
আরও পড়ুন: ব্যান্ডের বাইরে কখনও নিজেকে নিয়ে চিন্তা করিনি: পার্থ বড়ুয়া