ফরিদপুর, ১৫ ফেব্রুয়ারি (ইউএনবি)- ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকারপুর ইউনিয়নের গোবিন্দুপুর এলাকার চাষি বকার খান। লোকে যাকে চেনে পেঁয়াজ বীজের কারিগর হিসেবে।
বৃহত্তর ফরিদপুর ছাড়াও সারাদেশে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবেও এখন অনেক চাষির কাছে তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। যাকে অনুসরণ করে অনেক বেকার যুবক এখন স্বাবলম্বী।
গত ১৯ বছর যাবত বকার খানের উৎপাদিত উৎকৃষ্ট মানের পেঁয়াজের বীজ এখন দেশজুড়েও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।

পেঁয়াজ বীজ চাষী বকার খান ইউএনবিকে জানান, পারিবারিক উৎসাহে ২০০০ সালে ৬০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বীজের আবাদ শুরু করেন তিনি। তখন খরচ পড়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। ওই বছরই তিন মণ বীজ উৎপাদন করে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিবছরই বাড়তে থাকে তার পেঁয়াজ বীজের আবাদ।
বকার খান বলেন, তার উৎপাদিত বীজ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যেতেন। প্রথম থেকেই চাষিরা তার বীজ কিনে চাষে আশানুরুপ ফল পান। এতে তার বীজের বাজার বাড়তে থাকে। আজ সারাদেশেই ‘বকার খানের পেয়াজ বীজ’ ছড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সফল হয়েছি।

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, দেশের পেঁয়াজ বীজের মোট চাহিদার ৬০-৬৫ শতাংশ বীজ ফরিদপুর থেকে সরবরাহ করা হয়। আর সে বীজ বকার খানের উৎপাদিত।
তিনি বলেন, বকার খান একজন আদর্শ চাষি। তার বীজ সারাদেশেই সুনাম রয়েছে। তাকে অনুসরণ করছে অনেক চাষি।
আদর্শ চাষি বকার খান বলেন, তাকে দেখে তার এলাকার কয়েকশ বেকার যুবক এই বীজের চাষে ঝুঁকেছেন। এসব যুবক এক সময় সমাজে অন্যায় কাজে জড়িত ছিল। আজ তারাও পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, চলতি মৌসুমেও ২৫ একর জমিতে পেঁয়াজের বীজের আবাদ করেছেন। তার পেঁয়াজ বীজের নাম ‘খান বীজ ভাণ্ডার’। দেশের যেসকল জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, সেসব জেলায় তার বীজের সুনাম রয়েছে।

ফরিদপুরের সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সাইদ চৌধুরী বারী ইউএনবিকে বলেন, চাষি বকারের জন্য এই অঞ্চলের অনেক বেকার যুবকরা আজ স্বাবলম্বী হয়েছে। আমার ইউনিয়নের মাঠে যে দিকে তাকাবেন সেদিকে দেখা যাবে পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত শোভা পাচ্ছে।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ফরিদপুরে তিনটি জাতের পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়। এগুলো হলো তাহেরপুরী, সুখ সাগর, লাল তীর কিং এবং বারি পেঁয়াজ-১ ।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৮৩০ হেক্টর জমিতে বীজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হেক্টর প্রতি ৬৫০ কেজি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হবে।