করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর পবিত্র হজ পালন বাতিল হতে পারে এমন জল্পনা-কল্পনার মধ্যে মুসলমানদের হজের জন্য তাদের পরিকল্পনা বিলম্বিত করার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব সরকার।
করোনা পরিস্থিতিতে হজ হবে কি হবে না এ বিষয়ে সৌদি সরকারের কাছ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বলে ইউএনবিকে জানিয়েছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, দেখুন সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস। করোনা পরিস্থিতির এবং সৌদি সরকার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে এবার হজ হবে কি হবে না।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবছর সৌদি আরবে হজ পালন করতে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জন যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭,১৯৮ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজার জন।
সূত্রটি জানায়, হজ নিবন্ধনের সময় কয়েক দফা বাড়ানোর পর শেষ দফায় সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে মাত্র ৬৪,৫৯৪ জন নিবন্ধন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩,৪৫৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬১,৫৯৪ জন।
এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি হজ পালনে সরকার পরিচালিত সর্বনিম্ন ব্যয় ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে প্যাকেজ-৩ এর আওতায় হজ প্যাকেজ-২০২০ এর খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ।
হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতেও হজে হজযাত্রী পাঠাতে আমরা নিবন্ধন করার কাজ করে যাচ্ছি যাতে যদি সৌদি সরকার হজের ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে হজযাত্রী পাঠাতে পারি।’
তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত এখনও না পাওয়ার কারণে হজযাত্রী নিবন্ধিত সংখ্যা অনের কম হয়েছে।
যদি এবছর নিবন্ধিত হজযাত্রীরা হজে না যেতে পারেন তাহলে কী করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা ইতোমধ্যে হজে যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করে রেখেছেন তারা যদি সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে হজে না যেতে পারেন তাহলে আগামী বছর তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হজে যেতে পারবেন।
হজের জন্য যারা টাকা জমা দিয়েছেন তাদের আশ্বস্ত করে অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। এবার হজে না যেতে পারলে আগামীবার যাবেন। আগামীবার না যেতে চাইলেও তার টাকা ফেরত পাবেন। এ বিষয়ে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।’
চলতি বছর হজে যেতে আগ্রহীদের নিবন্ধণ কার্যক্রম ৩০ এপ্রিল শেষ হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব নুরুল ইসলাম ইউএনবিকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না।
এখন সারা বিশ্বের অবস্থা সবার জানা এবং এ পরিস্থিতিতে হজ নিয়েও অনিশ্চিয়তা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সৌদি সরকার হজের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখে তারপর যা করার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, হজ নিয়ে সিদ্ধান্ত যাই আসুক, যারা হজের জন্য টাকা জমা দিয়েছেন তারা প্রতারিত হবেন না।
হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ইউএনবিকে বলেন, ‘হজের নিবন্ধন শেষ করে আমরা প্রস্তুত আছি।’
এবারের হজ হবে কি হবে না বলাটা খুবই কঠিন (টাফ) উল্লেখ করে তিনি বলেন, সৌদি সরকারে সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে এবছর হজ হবে কি হবে না। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর আগামী ৩০ জুলাই (৯ জিলহজ) হজ হওয়ার কথা রয়েছে।
১৯৩২ সালে সৌদি সরকার গঠনের পর প্রতিবছর হজ পালন করে আসছেন বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
মহামারি রোগ ও হজ বাতিলের ঘটনা
বর্তমানের মতোই প্লেগ ও কলেরা রোগের মহামারি, অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ইতিহাসে হজ বাতিলের ঘটনা আগেও ঘটেছে।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, প্লেগ ও কলেরা রোগের মহামারির কারণে প্রথমবারের মতো ৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে এবং ফাতিমিদ সাম্রাজ্যের আমলে ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে খরা ও দুর্ভিক্ষের ফলে পায়ে হেঁটে হজ পালন বাতিল করে দেয়া হয়েছিল।
এদিকে, উনিশ শতক জুড়ে একাধিক বার চলাকালীন সময়ে কলেরার প্রকোপে হাজার হাজার হজযাত্রী মারা গিয়েছিল।
১৮৫৮ সালে পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনায় কলেরা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মিশরীয়কে লোহিত সাগরের সীমান্তে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। তাদেরকে দেশে ঢুকতে দেয়ার আগে কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।
১৯ শতকের বেশিরভাগ সময়ে এবং ২০ শতকের শুরুতে কলেরা একটি বহুবছরব্যাপী হুমকিতে পরিণত হয়েছিল এবং বেশ কয়েক বছর হজ বাতিলে বাধ্য করেছিল।
প্লেগের কারণেও ইতিহাসে হজ বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। ১৮৩১ সালে ভারতে কলেরা মহামারি হিসেবে দেখা দিলে হজ পালনে গিয়ে যাত্রাপথে হাজার হাজার হজযাত্রীর মৃত্যু হয়।
এমন বাস্তবতায় ঘন ঘন মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে প্রায়শই হজ বাতিলে ঘটনা ঘটে।