জানা যায়, এসব প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগই চীনা ঠিকাদারকে দেয়া হয়েছে বা চীন থেকে আসা সরঞ্জামের উপর অনেকটা নির্ভর করছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমেটেডের (পিজিসিবি) এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, চীনের উহান শহরে করোনা মহামারি সংক্রমণের পর থেকে দেশটি থেকে কোনো শ্রমিক বা কোনো সরঞ্জাম আসা বন্ধ রয়েছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সঞ্চালন খাতেও সাবকন্ট্রাক্টর হিসাবে অনেক চীনা সংস্থা কাজ করছে।
পিজিসিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘চীনে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি হলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় চীনা কর্মকর্তা ও কর্মীরা, বিশেষত প্রযুক্তিবিদরা ফিরে আসছেন না। ফলে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজগুলো আমাদের স্থগিত রাখতে হয়েছে।’
অফিসিয়াল সূত্র জানায়, স্থগিত হয়ে থাকা এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ভারত থেকে (ঝাড়খণ্ড) বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাহানপুর থেকে মনকশা বর্ডার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন, পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেমে অব বাংলাদেশের ইন্টিগ্রেটেড ক্যাপাসিটি ডেভলপমেন্ট প্রকল্প, সাউথ-ওয়েস্ট ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং সুরজমানীনগর (ত্রিপুরা, ভারত) - কুমিল্লা উত্তর (বাংলাদেশ) এর মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ স্থানান্তরের জন্য কুমিল্লা উত্তরে (বাংলাদেশ) ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক-টু-ব্যাক স্টেশন স্থাপন।
অন্য আরও কয়েক প্রকল্প হলো- রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ উত্তোলনের সুবিধার জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, আশুগঞ্জ পুরাতন ১৩২ কেভি এআইএস সাবস্টেশন প্রতিস্থাপন করে নতুন ১৩২ কেভি জিআইএস সাবস্টেশন প্রকল্প, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ট্রান্সমিশন অবকাঠামোর উন্নয়ন, ভেড়ামারা (বাংলাদেশ)-বাহরামপুর (ভারত) ২য় ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন (বাংলাদেশ অংশে) নির্মাণ, বাকেরগঞ্জ-বরগুনা ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন এবং বরগুনা ১৩২/৩৩ কেভি সাবস্টেশন নির্মাণ।
অগ্রাধিকার হিসাবে বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সুবিধার্থে কয়েকটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছিল। যার মধ্যে রয়েছে- আমিনবাজার-মাওয়া-মোংলা ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প, মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিকাল কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প (দ্বিতীয়) (পিজিসিবি অংশ: মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন), পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প, পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন এবং গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন, ঢাকা ও পশ্চিমাঞ্চলীয় ট্রান্সমিশন গ্রিড সম্প্রসারণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম অঞ্চলের আওতাধীন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও নেটওয়ার্ক জোরদারকরণ, পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নির্ভরযোগ্যতা এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের বর্ধন ও শক্তিশালীকরণ, বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প, পিজিসিবির আওতায় পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক প্রকল্প শক্তিশালীকরণ, গ্রিড ভিত্তিক বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পে সক্ষমতা বৃদ্ধি, ঢাকা-চট্টগ্রাম প্রধান বিদ্যুৎ গ্রিড শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, মোংলা-খুলনা (এস) ২৩০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প, আমনুরা ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন সম্পর্কিত ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন প্রকল্প, ওয়েস্টার্ন গ্রিড নেটওয়ার্ক ডেভলপমেন্ট প্রকল্প এবং ন্যাশনাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভলপমেন্ট প্রকল্পগুলোর কাজও বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে কারণে সৃষ্ট এ মারাত্মক পরিস্থিতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে স্বীকার করে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তবে পরিস্থিতি উন্নতির আগ পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করা কঠিন হবে।’
বহিরাগতদের প্রবেশে স্থানীয় জনপদের লোকেদের বাধার মূখে বাংলাদেশি শ্রমিকরাও মাঠ পর্যায়ের কাজে যোগ দিতে পারছেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে ট্রান্সমিশন ব্যবস্থার উন্নতিতে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার সঞ্চালন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে।
‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিক দিয়ে আমরা এখন ভালো পরিস্থিতিতে আছি। তাই, আমাদের পরবর্তী ফোকাস হচ্ছে মানুষের কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সঞ্চালন সুবিধার উন্নয়নের দিকে মানোযোগ দেয়া, বলেন তিনি।
নসরুল ইউএনবিকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির কারণে এখন সঞ্চালন লাইন স্থাপনের প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’