প্রায় ২৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার ১৭টি উপজেলায় মোট ১৮টি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই সেই কাজের। এমনকি কবে নাগাদ কুমিল্লার এই ১৮টি মডেল মসজিদের কাজ শেষ হবে সেটিও পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ২০১৭ সালের গৃহীত সরকারি প্রকল্পের অংশ হিসেবে সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ হওয়ার কথা। এর মধ্যে কুমিল্লা জেলায় হওয়ার কথা ১৮টি। কিন্তু এ কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও গণপূর্ত বিভাগ কুমিল্লা কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, দাউদকান্দি উপজেলার মডেল মসজিদ ছাড়া আর কোনোটির তেমন অগ্রগতি নেই।
লালমাই, বরুড়া, মনোহরগঞ্জ, হোমনা, তিতাস, মেঘনা ও মুরাদনগরে এখনও মডেল মসজিদ নির্মাণের জমি নির্ধারণই হয়নি। এসব উপজেলায় কোথাও সরকারি জমি, কোথাও দান কিংবা অধিগ্রহণের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
আরও পড়ুন: কুমিল্লায় ২৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ১৮টি মডেল মসজিদ
এছাড়া চান্দিনায় দোতলা ছাদ ঢালাই, বুড়িচংয়ে গ্রেটর বিম ঢালাই হচ্ছে। লাকসাম ও দেবিদ্বারে জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। সদর দক্ষিণে সম্প্রতি জমি পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণপাড়ায় দোতলার কাজ চলছে। কুমিল্লা সদর ও সিটি করপোরেশনে মডেল মসজিদের কাজ চলছে। নাঙ্গলকোটে গ্রেট বিমের কাজ শুরু হয়েছে আর চৌদ্দগ্রামে টেন্ডার হলেও জমি মেলেনি।
মডেল মসজিদের অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুস সাত্তার বলেন, ‘মডেল মসজিদ নির্মাণে মূল প্রতিবন্ধকতা জমি। এছাড়া বাজেটেও আরও বেশি বরাদ্দ প্রয়োজন। করোনার সময়ে কাজ থেমে থাকায় আমরা পিছিয়ে গেছি। তবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাউদকান্দির মডেল মসজিদটি নির্মাণ শেষ করবো।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুমিল্লার সহকারী পরিচালক মো. নাজমুস সাকিব বলেন, ‘মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পগুলোতে জেলা শহরে লিফট-এসিসহ চারতলা এবং উপজেলা শহরে তিন তলা বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ হবে। এছাড়াও নারী ও পুরুষের পৃথক নামাজ ও অজুর স্থান, পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, হজযাত্রীদের নিবন্ধন, পর্যটকদের আবাসন, গাড়ি পার্কিং, লাইব্রেরি, হিফজ মাদরাসা, দাফন-কাফনের ব্যবস্থা এবং ইমাম ও মুয়াজ্জিনের থাকার ব্যবস্থাসহ নানান সুযোগ-সুবিধা থাকবে।’
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুমিল্লার উপপরিচালক সরকার সারোয়ার আলম বলেন, ‘সবগুলো মসজিদই একই ডিজাইনে তৈরি হবে। পূর্ব-পশ্চিমে ১৭০ ফুট এবং উত্তর-দক্ষিণে ১২০ ফুট জায়গা নিয়ে কমপক্ষে ৪৩ শতাংশ কওে জায়গা প্রয়োজন। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজগুলো শেষ করতে। মূলত জমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই আমরা পিছিয়ে আছি।’
আরও পড়ুন: ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তুলতে মসজিদ ভূমিকা রাখবে: স্পিকার
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে মডেল মসজিদ স্থাপন প্রকল্পের বরাদ্দের হিসাব থেকে জানা যায়, শুরুতে কুমিল্লা জেলা সদরে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, আদর্শ সদর উপজেলায় ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, সদর দক্ষিণে ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, বরুড়ায় ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার, বুড়িচংয়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার, চান্দিনায় ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার, চৌদ্দগ্রামে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার, দাউদকান্দিতে ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার, দেবিদ্বারে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার, হোমনায় ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার, লাকসামে ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার, মুরাদনগরে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার, নাঙ্গলকোটে ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার, মেঘনায় ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার, তিতাসে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার, মনোহরগঞ্জে ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার এবং লালমাইয়ে ১২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
মডেল মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা উচিৎ বলে মনে করছেন কুমিল্লার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ প্রসঙ্গে আলহাজ্ব শাহ মোহাম্মদ আলমীর খান বলেন, স্বচ্ছতার সাথে মডেল মসজিদগুলোর দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা উচিত। এটি সরকারের একটি অনন্য উদ্যোগ। এতে করে প্রতিটি উপজেলায় ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর নান্দনিকতা প্রকাশ পাবে। সাধারণ মানুষ ইসলাম ধর্মীয় কার্যক্রম সহজে করতে পারবেন।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন জমি পছন্দের বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বললেও আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে এবং কেউ দান করলে ও সেটি নিয়ে কোনো জটিলতা থাকলে সেগুলোও দ্রুত শেষ করতে। কুমিল্লায় মডেল মসজিদ প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে আমরা সচেষ্ট আছি।’