খুলনা, ১৩ নভেম্বর (ইউএনবি)- পর্যাপ্ত ক্রেতা-বিক্রেতার অভাবে জমছে না খুলনার ডুমুরিয়ার টিপনা গ্রামের ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’। এছাড়া মার্কেটটির কাজ পুরোপুরি শেষ না হতেই এটি চালু করা হলেও ভবন নির্মাণে নানা ত্রুটি দেখছেন স্থানীয়রা।
কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী করে গড়ে তোলা ও সরাসরি ন্যায্য মূল্যে তৃণমূলের কৃষিপণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিদেশি অর্থে নির্মিত হয়েছে এই মার্কেট।
মার্কেটটিতে পর্যাপ্ত ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম না হওয়ায় ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের শেখ বাড়ির সামনে ভিলেজ সুপার নামের এ মার্কেটটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ইন্টারন্যাশনাল এনজিও ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’।
এরপর এটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২ একর ১০ শতক জমির উপর নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্কেটটির আনুষ্ঠানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৯৮ ভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয় চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে।
এরপর চলতি বছরের অক্টোবরের শেষের দিকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই মার্কেটটি চালু করা হয়। কিন্তু চালুর এক মাস অতিবাহিত হলেও মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম তেমন নেই। প্রথমদিকে ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আগ্রহ থাকলেওে এটি চালুর পর তেমন সাড়া মিলছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা রিন্টু বেপারী জানান, মার্কেটে পর্যাপ্ত ক্রেতা-বিক্রেতা নেই। এছাড়া সব দোকানঘর এখনও বরাদ্দ হয়নি। ফলে কোনো বিক্রেতা মাছ ও সবজি আনলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচা-কেনা হচ্ছে না।
দোকান ঘর বরাদ্দ নেয়া একাধিক মালিক জানান, মার্কেটটি প্রকৃতপক্ষে চালুর জন্য ক্রেতার আগমন ঘটাতে হবে। কারণ ক্রেতা আসলে বিক্রেতা আসবে। ক্রেতা না থাকায় বেশির ভাগ লোক ঝুঁকি নিয়ে এ মর্কেটে আসতে অনীহা দেখাচ্ছে। এছাড়া মার্কেটটি সম্পর্কে প্রচারণা নেই। বেশি বেশি করে মার্কেট চালুর খবর মানুষকে জানানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
মার্কেটটিতে সুযোগ সুবিধার মধ্যে রয়েছে ডিপো, ১০ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার চিলার আইচ ফ্যাক্টরি, মসজিদ, ইলেকট্রিক্যাল ম্যাকানিক্যাল রুম, হর্টি ক্যালচার প্রসেসিং জোন, হর্টি প্যাকেজিং জোন, একোয়া প্রসেসিং জোন, একোয়া প্যাকেজিং জোন, একোয়া আড়ৎ, হর্টি আড়ৎ, ব্যাংক, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ফার্মার ট্রেনিং সেন্টার, অফিস সিকিউরিটি রুম, টয়লেট জোন ও বাউন্ডারি ওয়াল ইত্যাদি।
ভিলেজ সুপার মার্কেটের সাইট ইঞ্জিনিয়ার অনিরুদ্ধ কুমার সরকার বলেন, মার্কেটটি থেকে খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকার তৃণমূল কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে সরাসরি কৃষি পণ্য (ফল-মূল, শাক-সবজি, দুধ, মাছ ইত্যাদি) ক্রয় করে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর আগোড়া সুপার শপে বিক্রির উদ্দেশ্য রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিদেশেও রপ্তানি করা হবে।
তিনি বলেন, এখানে কৃষকরা নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী হয়ে গড়ে উঠবে। ফলে প্রকৃতপক্ষে কৃষকরাই লাভবান হবে এমন প্রত্যাশা রয়েছে।
‘কৃষকরা যাতে কোনোভাবেই প্রতারিত ও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয় বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বরের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড মনিটরিং করবেন। এছাড়া এ মার্কেটে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের কোনো স্থান নেই, বলেন অনিরুদ্ধ কুমার সরকার।’
এদিকে মার্কেট নির্মাণে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। ভবনের স্থায়ীত্ব নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। ভবনের ছাদে ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে, যার কারণে বৃষ্টি হলে ফাটল দিয়ে পানি এসে ভেতরের দেয়াল ভিজে যাচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে এখনই টাইলস উঠে গেছে।
এমন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইতোমধ্যে কাজের শতকরা ৯৮ ভাগ শেষ হয়েছে। ভবন ত্রুটিমুক্ত করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ত্রুটিমুক্ত করেই আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কেটটি উদ্বোধন করা হবে।
ভিলেজ সুপার মার্কেটের হেড অব বিজনেস তানভীর রহিম বলেন, ভবন ত্রুটিমুক্ত করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ত্রুটিমুক্ত হওয়ার পর আগামী আগস্ট মাসে পুরোপুরি মার্কেটটি চালু করা হবে।
কৃষক তালেব হোসেন ও বিকাশ পালসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা জানান, মার্কেটটি চালু হলে কৃষকদের সরাসরি পণ্য বিক্রির অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ অঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে এবং জীবন-যাত্রার মান উন্নত হবে। স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।
তারা বলেন, তবে ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। যার কারণে কাজের মান খারাপ হয়েছে। আর মার্কেটটি চালুর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন না।
মার্কেটে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটাতে কি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে মার্কেটের ম্যানেজার রথীন্দ্র কোনো উত্তর দেননি।