এতে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সাথে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে এ কাজ শেষ করতে না পারলে যেটুকু কাজ হয়েছে তাও নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডেল্টা প্ল্যানের অংশ হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় চরভদ্রাসনের পদ্মা নদী হতে আড়িয়াল খাঁ নদের সংযোগ খাল পুনঃখনন হিসেবে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করে।
এরই অংশ হিসেবে চলতি বছর প্রায় চার কোটি ৩১ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে হরিরামপুর ইউনিয়নে পদ্মা নদী থেকে জাকিরেরসুরা হয়ে পাশ্ববর্তী রামনগরে আড়িয়াল খাঁ নদ পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার খালটি খননের কাজ পায় মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর হতে তারা অ্যাক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে খননের কাজ শুরু করে। প্রায় দেড় কিলোমিটার খননের পর গত ২৯ জানুয়ারি রাতে কাজটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
অ্যাক্সকেভেটর চালক নাসির মোল্লা, আনোয়ার হোসাইন ও সাইটের সাব-কন্ট্রাক্টর জিন্নাত ফকির অভিযোগ করেন, ২৯ জানুয়ারি রাতে চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খান দলবল নিয়ে এসে তাদেরকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলে যায়।
এসময় তাদেরকে হুমকি-ধামকি ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় জানিয়ে জিন্নাত ফকির বলেন, কাজ বন্ধ থাকলেও পাঁচটি এক্সকেভেটর মেশিন বাবদ প্রতিদিন তাদের প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ক্ষতি গুণতে হচ্ছে। খনন কাজ শুরু হতে যত দেরি হবে ক্ষতির পরিমাণ ততই বাড়তে থাকবে।
মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারি মো ইকবাল হোসেন জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে না পারলে বর্ষা মৌসুমে খনন কাজ করা সম্ভব হবে না। কারণ তখন পদ্মার পানি বেড়ে যাবে এবং খালে পানি থাকবে।
ফলে এরই মধ্যে যেটুকু খাল খননের কাজ তারা সম্পন্ন করেছেন তাও নষ্ট হয়ে যাবে, বলেন তিনি।
সূত্র জনায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ ২১ জন বাদি হয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাউবো ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সহ ১৫ জনকে বিবাদী করে একটি রিট করেন।
গত ২৯ জানুয়ারি এ রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটকারীদের সাথে বিষয়টি নিস্পত্তি করার নির্দেশ দেন।
তবে, উচ্চ আদালত খাল খনন কাজ বাস্তবায়নের বিষয়ে কোন স্থগিতাদেশ দেয়নি।
এদিকে, উচ্চ আদালতের আদেশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কোন প্রকার আলোচনা না করেই উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ দলবল নিয়ে এসে রাতের আধাঁরে কাজটি বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ তুলেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে খাল খননের কাজ বন্ধ করার কোনো নির্দেশ দেননি বলে দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের এ নেতা জানান, ওই খালে তার ও আরও অনেকের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি রয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে এলাকাবাসী কাজটি বন্ধ করে দিয়েছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় হতে খালের জমি নির্দেশনা করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেয়ার পরে খনন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। যখন ওই লাল পতাকা টাঙানো হয়েছিলো তখনই তারা আপত্তি জানাতে পারতো। এখন কাজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শেষ হওয়ার পর এভাবে কাজ বন্ধ করে দেয়া মানে প্রকল্পটির ভবিষ্যতই অনিশ্চিত করে দেয়া।
এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে কৃষি ও নৌ যোগাযোগসহ নানা সুবিধার জন্য খালটি খনন করা জরুরি বলে অভিমত দেন তারা।
মো মোসলেমউদ্দিন খান নামে সাবেক এক ওয়ার্ড মেম্বার বলেন, দীর্ঘদিন আগেই এ খালটি ভরাট হয়ে গিয়েছিল। এখন পুনঃখনন করা হলে এলাকাবাসী উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।
ওই এলাকার কৃষক সামসুল বেপারী বলেন, খালটি খনন করা হলে আশেপাশের ইরি ব্লকে পানি দেয়াসহ পাট জাগ দিতে সুবিধা হবে। কৃষকেরা কম খরচে নৌ পথে তাদের ফসল আনা নেয়া করতে পারবে।
মো হারুন মুন্সি (৬৫) নামে স্থানীয় মৌলভীর চরের এক বাসিন্দা বলেন, ছোটবেলায় এ খালে লঞ্চ চলতো। আমরা এই পথেই যাতায়াত করতাম। খালটি খনন করা হলে এলাকাবাসী কৃষিকাজসহ নানা দিক দিয়েই উপকৃত হবেন।
খাল খননের এ কাজটি যেনো বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, সরকারি কাজে কেউ বাধা দিতে পারে না। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ তুলে ধরতে পারে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাইকোর্ট খাল খননের স্থাগিতাদেশ দেয়নি, তবে কেনো কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে।