বাগানের শত শত গাছের লিচু খরায় পুড়ে ঝরে যাচ্ছে। যেগুলো গাছে ঝুলছে সেগুলোর অধিকাংশে দেখা যাচ্ছে কালো দাগ। আবার অনেক লিচু গাছেই ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ চিত্র শুধু চাষি কদম আলীর লিচু বাগানের নয়। জেলার অধিকাংশ লিচু চাষির বাগানের একই অবস্থা।
জেলার সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, প্রচণ্ড গরম আর খরায় এ বছর জেলার লিচুর আবাদ হতাশাজনক। যা-ই ফল এসেছে, সেগুলোও শেষ পর্যন্ত টেকানো যায় কিনা তাই এখন দেখার বিষয়।
প্রতিবছর ফরিদপুরের সদর উপজেলা, মধুখালী ও বোয়ালমারী উপজেলায় বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে লিচুর আবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। বাজারে লিচু উঠার মাসখানে আগে (আগড়) এ অঞ্চলে লিচু ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। যে কারণে দামও ভাল পায় চাষিরা। কিন্তু চলতি মৌসুমে কৃষকদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার রেখা।
সরেজমিনে মধুখালীর জাহাপুর, বোয়ালমারীর কাদিরদী ও সদর উপজেলার চানপুর এলাকার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পরিবারের বিভিন্ন বয়সী সদস্যরা বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করছে। তারপর সেগুলো বাছাই করছেন।
ওই এলাকার চাষিদের কাছ থেকে যে সকল ব্যবসায়ী আগেই লিচু বাগান কিনে নিয়েছেন এবছর তারা মূলধন তুলতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত।
মধুখালীর জাহাপুর এলাকার লিচু চাষি মো. রাশেদুল ইসলাম বাবু জানান, বাগানে কীটনাশক, সার, ওষুধ ব্যবহার করেও লিচুর ফলনের ভালো মান ধরে রাখা যাচ্ছে না।
একই এলাকার কলেজ শিক্ষক লিচু চাষি সেলিম ভূইয়া জানান, এ মৌসুমে অধিক খরার কারণে লিচুগুলো ঝরে যাচ্ছে এবং যেগুলো গাছে রয়ে গেছে সেগুলোর গায়ে কালো দাগ পড়ছে। এ কারণে বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
বোয়ালমারীর কাদিরদী এলাকার চাষি মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে লিচু চাষে বেশি লাভ থাকায় লিচুর বাগান করেছি। তাছাড়া এই অঞ্চলের কৃষকের আয়ের অন্যতম উৎস লিচু চাষ। ‘বেশ কয়েক বছর ধরে লাভের মুখ দেখলেও এবার পুঁজি তোলা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি,’ বলেন তিনি।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ১নং ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম মজনু জানান, গত ৫/৬ বছর ধরে তাদের এলাকায় অনেক লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমে শুরুতে বেশ ভাল ফলন ছিল বাগান গুলোতে, শেষ সময়ে এসে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে বাগানগুলোতে ফলন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী লিচুর গায়ে কালো দাগ, ফেটে যাওয়া এবং ঝরেপড়া প্রসঙ্গে বলেন, তাপদাহ ও খরার কারণে লিচু ঝড়ে পড়ছে। লিচুতে কালো দাগ দেখা দিয়েছে। এমনকি ফেটেও যাচ্ছে।
তার পরামর্শ, প্রচণ্ড তাপদাহ থেকে লিচুর ফলন ধরে রাখতে হলে ডায়বেন এন ৪৫ অথবা টিল্ট পানিতে মিশিয়ে লিচু পাকার আগে (সময় মতো) গাছে স্প্রে করতে হবে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন বার। এছাড়াও খরার পরিমাণ বাড়লে গাছে সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, তাপদাহের কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই সৃষ্টি হয়, এজন্য চাষিকে যত্মবান হতে হবে।
ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই উপ-পরিচালক জানান, চলতি মৌসুমে ফরিদপুর অঞ্চলে ৩০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে, যা প্রতিহেক্টরের ৮ মেট্রিক টন হারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকার দোহার থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ১১ বছর ধরে ফরিদপুর থেকে লিচু নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করেন। তিনি জানান, এই লিচু বেশ সুস্বাদু, এমনকি একমাস আগেই ফলন পাওয়া যায়। যে কারণে ক্রেতাদের কাছে এর চাহিদা রয়েছে।
লিচু ব্যবসায়ী শহিদুলের মতো আরও অনেকেই লিচু মৌসুমে এখানে এসে লিচু নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন। তাদের অনেকেই আগেই বাগান কিনে নিয়েছেন। তবে এবার ভালো ফলন পাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।