বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অমূল্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর অন্যতম। লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ি অঞ্চলের কোলে, সবুজে মোড়া প্রাকৃতিক পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই বিহার শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা নয়, এটি বাংলাদেশের প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতা, স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির জীবন্ত সাক্ষ্য।
হেমন্তের শেষভাগে শীতকালীন পর্যটন মৌসুমকে স্বাগত জানাতে ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর এলাকা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন এ দুই ঐতিহাসিক স্থাপনাকে ঘিরে সাজানো হয়েছে ফুলের বাগান, উন্নত করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর দেওয়া হয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। ট্যুরিস্ট পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় দিনরাত কাজ করছেন।
কুমিল্লা সদর উপজেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত শালবন বৌদ্ধ বিহারটি খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব নির্মাণ করেন বলে ধারণা করা হয়। প্রায় ৩৭ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা এই বিহারের প্রতিটি বাহু ১৬৭.৭ মিটার দীর্ঘ এবং চারপাশের দেওয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ মিটার। কেন্দ্রে অবস্থিত মূল মন্দিরটি ঘিরে রয়েছে ১১৫টি কক্ষ, যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিদ্যা ও ধর্মচর্চায় নিমগ্ন থাকতেন। প্রতিটি কক্ষে তিনটি করে কুলুঙ্গি ছিল, যেখানে রাখা হতো দেবমূর্তি, প্রদীপ ও ধর্মীয় সামগ্রী।
প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে পাওয়া গেছে আটটি তাম্রলিপি, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়া মাটির ফলক, সিলমোহর, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি, যা এ অঞ্চলে একসময়কার সমৃদ্ধ বৌদ্ধ সভ্যতার বিকাশ ঘটার প্রমাণ। বিহারের নামকরণ হয়েছে এখানকার শাল-গজারির ঘন বন থেকে, যার অবশিষ্ট কিছু এখনো টিকে আছে।