যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিদিন ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। এব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা। ফলে অপরাধ বেড়েই চলেছে। অনেক ক্ষেত্রে বাস স্টাফদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
তবে পরিবহন কর্তৃপক্ষের দাবি, যাত্রীরা সচেতন হলেই চক্রটি কারও ক্ষতি করতে পারবে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভারতে চিকিৎসা, ব্যবসা ও ভ্রমণে যেতে এই রুটে যাত্রীদের ভিড় থাকে। প্রতিদিন প্রায় আট হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। অপরাধীরা জানে এই রুটের যাত্রীদের কাছে নগদ অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী থাকে। তাই এই রুটে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতাও বেশি। গত একমাসে বেনাপোল পোর্ট থানায় অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াদের তালিকা বেড়েই চলেছে। কেউ যাত্রী সেজে পিছু নিচ্ছে আবার কেউ মাঝ পথে ফেরিওয়ালা বা ডাব বিক্রেতা হয়ে মানুষ ঠকাচ্ছে। গাড়িতে চড়ে পাশে বসেই যাত্রীদের সাথে তারা সখ্যতা গড়ে তোলে। পরে সুযোগ বুঝে অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে নেয়।
পুলিশের অভিযোগ, এই রুটে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে যারা সর্বস্বান্ত হন তাদের ১০ শতাংশ থানায় অভিযোগ করেন। আর বাকি ৯০ শতাংশ ঝামেলা এড়াতে বিষয়টি চেপে যান। সাধারণত যাদের পাসপোর্ট খোয়া যায় তারাই থানায় অভিযোগ করেন।
শুক্রবার বেনাপোল বন্দরে ভারতের ২৪ পরগনার বেলপুর চয়নঘোনা এলাকার দিনেশ মালাকারের ছেলে অসিম মালাকারের (৩৫) সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা চার বন্ধু ভারতে যেতে ঢাকা থেকে ঈগল পরিবহনে উঠি। ফেরিঘাটে নেমে আখের রস খেয়ে আবার বাসে উঠেছিলাম। এরপর আর কিছু বলতে পারবো না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আমাদের সবার পাসপোর্ট, টাকা, মোবাইল সবকিছুই খোয়া গেছে। বাড়ি ফিরতে থানায় অভিযোগ লিখিয়েছি।’
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক ইমরান হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তায় এসব সংঘবদ্ধ চক্রকে ধরতে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে ফেরিঘাটে খাবার বিক্রেতাদের নজরদারিতে রাখতে হবে। এছাড়া দূরপাল্লার বাসে টিকিট নিতে পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করতে হবে। তাহলে অপরাধ কিছুটা কমতে পারে।’
স্থানীয় বেনাপোল বাজার ফল ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, ‘আগে যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে যাত্রীদের ভিডিও ধারণ করা হতো। এতে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা অপরাধ করতে ভয় পেত। কিন্তু এখন সেটা করা হয় না। এতে রহস্যজনকভাবে বাসে যাত্রীরা অজ্ঞান পার্টির হাতে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এমনকি তাদের জীবনও নিরাপদ নয়। তাই বাসে নিরাপত্তা বাড়ালে যাত্রীরা রক্ষা পাবে।’
ভারতগামী যাত্রী ইলিয়াছ কবির বলেন, ‘বাস কর্তৃপক্ষের আচরণে মনে হয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের সাথে তাদের শখ্যতা রয়েছে। বাসে উঠার পর কেউ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়লে তারা কোনো দায়িত্বও নিতে চায় না।
বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ঢাকা-বেনাপোল রুটে ইদানিং অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তাদের খপ্পরে পড়ে প্রায়ই অনেকে নিঃস্ব হচ্ছেন। বাস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠছে। গত সপ্তাহে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়া এক পাসপোর্ট যাত্রীকে রাস্তায় ফেলে যায় সোহাগ পরিবহনের সুপার ভাইজার।’