সম্প্রতি এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ভাঙনে ২টি স্কুল বিলীন, বাড়ছে নদ-নদীর পানি
সংশ্লিষ্টরা জানান, গৌরীপুর বাজার সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর ব্রিজ পয়েন্টে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটার মাধ্যমে খনন কার্যক্রম শুরু হয়। খনন শেষে প্রাপ্ত সেচের পানিতে পঞ্চাশ হাজার বিঘা কৃষি জমিতে ১২ লাখ ৫০ হাজার মণ বোরো ধান উৎপাদন সহজ হবে।
এ নদ পুনঃখননের জন্য ২০ বছর ধরে কাজ করছেন স্থানীয় শিক্ষক ও পরিবেশ সংগঠক মতিন সৈকত। তিনি দাবি আদায়ে মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, কোদাল মিছিল, প্রতীকী অনশন, নদী মেলা ও নদী অলিম্পিয়াড করেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এসএম মিজান বলেন, ‘মতিন সৈকতের নদী, ফসল ও প্রকৃতি নিয়ে কাজকে কেউ কেউ পাগলামি মনে করেন। তবে এমন ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো লোকদের কারণে সমাজটা এখনও সুন্দর আছে। মতিন সৈকতের চেষ্টার কারণে কালাডুমুর নদ তার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে।’
ছড়া পত্রিকা টুপটাপ সম্পাদক ছড়াকার ওমর ফারুক নাজমুল বলেন, ‘নদী আর কৃষির প্রতি মতিন সৈকতের দরদ দীর্ঘদিনের। প্রকৃতি যোদ্ধা মতিন সৈকতের চেষ্টায় কালাডুমুর খনন হচ্ছে। তার এসব শুভ উদ্যোগ বেঁচে থাকুক।’
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার ওপরে, পানিবন্দী ৫০ হাজার মানুষ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করা মতিন সৈকত স্থানীয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রভাষক। তিনি স্ত্রী ও সন্তানসহ দাউদকান্দি উপজেলার আদমপুর গ্রামের বাড়িতে বাস করেন। শিক্ষকতার পরে মাছ চাষ, ফসল ফলানো, পাখির পরিচর্যা, বিষমুক্ত ফসলের আন্দোলন ইত্যাদি কাজে সময় কাটে তার। এছাড়া ২০ বছর ধরে তিনি ২০০ বিঘা জমিতে স্বল্প মূল্যে বোরো ধানের খেতে সেচ দিচ্ছেন। যেখানে প্রতি বিঘা জমিতে সেচ দিতে দুই হাজার টাকা ব্যয় করতে হয় সেখানে তিনি দুইশ টাকা করে নিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে ফের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল
কালাডুমুর নদ পুনঃখনন নিয়ে তিনি বলেন, ‘কালাডুমুর পুনঃখনন ছিল আমার জীবনের অন্যতম সেরা লক্ষ্য। এ কাজটি কৃষি, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি জনকল্যাণে বহুমুখী উপকারে আসবে।’
দাউদকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী বলেন, কালাডুমুর নদ পুনঃখনন মতিন সৈকতের আন্দোলনের ফসল। স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদে অনেকবার আবেদন করে গৌরীপুর থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার নদ পুনঃখননের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নদটি পুনঃখনন শেষ হলে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবেন।
গোমতী নদীর শাখা কালাডুমুর নদ। দাউদকান্দির গৌরীপুর থেকে উৎপত্তি হয়ে নদটি জিংলাতলি, ইলিয়টগঞ্জ উত্তর এবং দক্ষিণ ইউনিয়ন অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী মুরাদনগর, চান্দিনা, দেবিদ্বার ও কচুয়া উপজেলায় প্রবাহিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘আম্পানের’ প্রভাবে সাতক্ষীরায় উত্তাল নদ-নদী, আশ্রয় কেন্দ্রে লক্ষাধিক মানুষ
কালাডুমুর নদ আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার বিঘা জমির প্রায় ১২ লাখ ৫০ হাজার মণ বোরো ধান উৎপাদনে সেচের পানির একমাত্র উৎস। এছাড়া খরা মৌসুমে প্লাবন ভূমির মৎস্য প্রকল্পগুলোতে পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি নৌ-পথের নাব্যতা সৃষ্টি, প্রাকৃতিক মাছের অভয়ারণ্য, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় নদটি পুনঃখনন অপরিহার্য।
কালাডুমুর নদের তলদেশে বালি ও পলি জমেছে। নদের চেহারা ঢাকা পড়েছে কচুরিপানায়। শুকনো মৌসুমে নদটি শুকিয়ে যায় এবং বোরো ধান আবাদে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।