গত ২০ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টায়, অর্থাৎ ২১ সেপ্টেম্বর রাথী জন্মগ্রহণ করে। এরপর থেকে সাধারণ কয়েদিদের মত মায়ের সাথে দিনাতিপাত করছেন শিশু কন্যা রাথী। সাধারন শিশুর মতো জন্ম হলেও বাবা, দাদা- দাদী, নানা-নানীসহ কারই আদর পায়নি শিশু রাথী। এমন কি পৃথিবীর মুক্ত আলো বাতাসও পায়নি সে।
রাথী কামরূন্নাহার মনির সন্তান। ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির মধ্যে একজন হলেন মনি। মুবাশশিরা খানম রাথীকে কোলে নিয়ে আদালতে ফাঁসির রায় শুনল মণি। তিনি নুসরাতের সহপাঠী ও বান্ধবী ছিলেন।
গত ২৪ অক্টোবর নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানকে কোলে নিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ান মা কামরুন নাহার মনি। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রায় ঘোষণার সময় মণিসহ সব আসামির উপস্থিতি ছিলেন।
কাঠগড়ায় মায়ের কোলে কান্না করছিল নবজাতক কন্যা শিশুটি। আর মনি তাকে আকড়ে ধরে কান্না থামানোর চেষ্ঠা করছিলেন। রায়ের পর মায়ের সাথে থাকা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
ফেনী জেলা কারাগারের জেলার দিদারুল আলম জানান, সাধারণ কয়েদির সাথে থাকলেও প্রয়োজনে জেল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছেন।
ফেনী জেলা কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার রফিকুল কাদের বলেন, ‘ফেনী জেলা কারাগারে থাকা নুসরাত হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কুমিল্লা কারাগারে ফাঁকা থাকলে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে ফাঁকা না থাকলে কাশিমপুরসহ যেসব কেন্দ্রীয় কারাগারে কনডেম সেল ফাঁকা রয়েছে, সেখানে আসামিদের পাঠিয়ে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে কামরুন নাহার মনিকেও তার সন্তান নিয়ে যেতে হবে।
তবে এ মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, ‘যতদিন পযর্ন্ত শিশুটি নিজ হাতে খেতে না পারবে ততদিন মনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে না। আমরা অতি দ্রুত হাইকোর্টে আপিল কবর।’
কামরুননাহার মনির স্বামী রাসেদ খান রাজু বলেন, ‘গত ৯ সেপ্টেম্বর ৩৪২ ধারায় আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেয়ার সময় মনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।’
রাজু আরো বলেন, ‘নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পূর্বের রাতে ডায়রিয়া ও পেট ব্যথার কারণে সকালে মনিকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পর পরীক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে এসেছিলাম। আমার বিশ্বাস মনি এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে না। আশা করছি হাইকোর্টে আপিল করে ন্যায় বিচার পাবো।’
রায়ের পর মনির স্বামী রাশেদ খান রাজু তার নামে ব্যক্তিগত ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিতে শনিবার রাতে আবেগঘন স্ট্যাটাস পোস্ট করেন যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
সবার প্রশ্ন এখন রাথীকে নিয়ে। কবে সে মুক্ত আলোয় আসতে পারবে? স্বাভাবিক জীবনে কবে ফিরতে পারবে? তার জীবনে আলো আসবে কী? হয়ত সময় সব প্রশ্নের জবাব মিলিয়ে দিবে। কিছু না বুঝলেও রাহীর জীবনে নির্মম বাস্তবতা হলো, মায়ের কোলে থেকেই মায়ের মৃত্যুদন্ডের রায় শুনতে হলো তাকে।