রাঙ্গামাটির পাহাড়, বন আর স্বচ্ছ জলাধার অতিথি পাখিদের বেশি আকর্ষণ করে। তাই অতিথি পাখি ভিড় জমাচ্ছে এশিয়ার বৃহত্তর কাপ্তাই হ্রদের আশে পাশের এলাকাগুলোতে। একটু উষ্ণতার খোঁজে ছুটে আসা এসব নানা রঙের পাখির আগমনে তাই রাঙ্গামাটির পুকুর, বিল ও হাওর হয়ে ওঠে চমকপ্রদ এক নৈসর্গিক দৃশ্যের।
শীত প্রবণ দেশ থেকে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে সবুজ পাহাড়ের হাতছানিতে প্রকৃতির ডাকে ছুটে আসে এসব অতিথি পাখি। হ্রদের জলেভাসা চরগুলোতে শত শত অতিথি পাখির কলতানে মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে প্রকৃতি।
শীত মৌসুমের শুরুতেই পর্যটন শহর রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলাসহ রাঙ্গামাটির ডিসি বাংলো, সুভলং, লংগদু, কাট্টলী, মাইনিমুখ, সাজেক, বাঘাইছড়ি, হরিণা, বিলাইছড়ি, বরকলসহ পাহাড়ের বিভিন্ন বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে এখন দেখা যায় অতিথি পাখি।
বিভিন্ন দেশ থেকে আসা এসব পাখির কলরবে কানায় কানায় ভরে গেছে নদীর তীর ও জলেভাসা চরগুলো। প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় সাধারণত অতিথি পাখি বেশি দেখা যায়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শীতের শুরুতেই পাহাড়ি অঞ্চলে অতিথি পাখি এসেছে চোখে পড়ার মতো।
বিশেষ করে লংগদুর কাট্টলী বিলে শীতকালে আগমন ঘটে অতিথি পাখিদের আনাগোনা। ঝাঁকে ঝাঁকে এইসব পাখি এসে বসে বিলে। এ মৌসুমে কাট্টলী বিল তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে ।
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিরাপদ স্থান হিসেবে অতিথি পাখিরা বেছে নিয়েছে এ বিলটি। পানকৌড়ি আর নানা জাতের পাখির ঝাঁক বিলের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। আর শীতে বেড়াতে যারা আসেন তারা মূলত শীতের পাখি দেখতেই কাট্টলি বিলেই আসেন। ছোট সরালি, টিকি হাঁস, বড় সরালি, মাথা মোটা টিটি, গাঙচিল, গাঙ কবুতর, চ্যাগা, চখাচখিসহ নানান প্রজাতির পাখির ঝাঁকে মুখরিত হয়ে থাকে এই কাট্টলি বিলটি।
জলেভাসা চর ও নদীর পাড়ে যেসব পাখি বেশি দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে- পাতিহাঁস, ডাহুক, কালাম, বক, বইধরসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি।
কাপ্তাই হ্রদে আসা ভ্রমণ পিয়াসু সাবের আল জাবের নামের এক চাকরিজীবী স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। এখানে অতিথি পাখিদের আগম ঘটে এমন সংবাদে ছুটে এসেছেন। জানান, বিভিন্ন প্রকার পাখিদের মিলন মেলা প্রকৃতিকে যে কত মুগ্ধ করে তুলতে পারে চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না।
এই পর্যটক বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এ পাখিগুলো যেন নিরাপদে এখানে আসতে পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা । আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ু বাঁচাতে পারলে এমন নৈসর্গিক দৃশ্য সব সময় দেখা যাবে। তিনি পাখিদের নির্বিঘ্ন অভয়ারণ্য গড়ে তোলারও দাবি জানান।
তবে প্রতিবছর শীতের পাখি পাহাড়ে আসলেই কিছুসংখ্যা অসাধু ব্যক্তি অতিথি পাখি নিধনের জন্য উঠে পড়ে লাগে। বিভিন্ন রকম ফাঁদ পেতে শিকার করা হয় অতিখি পাখি। অতিথি পাখি শিকারের জন্য তৈরি করা হয় নতুন নতুন ফাঁদ। তাই শিকারিদের নির্বিচারে পাখি হত্যার কারণে এখন রাঙ্গামাটির বিভিন্ন এলাকায় কমে আসছে অতিথি পাখিদের আনাগোনা।
বিলের আশপাশের লোকজন ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছয় থেকে সাত বছর ধরে এখানে অতিথি পাখিদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। শীতের শুরুতেই হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে এগুলো খাবারের জন্য ছুটে আসে বিলে। শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এদের সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে। তবে কিছু কিছু লোক এইসব শীতের পাখিদের ধরতে বিভিন্ন রকম ফাঁদ পেতে শিকার করে থাকে। এলাকার বিভিন্ন ডুবোচরে তারা ফাঁদ পেতে এইসব অতিথি পাখি শিকার করে বাজারে বিক্রি করে দেয়।
প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর উত্তরের শীত প্রধান দেশ থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি বাংলাদেশে আসে। মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই এরা আসে। আবার মার্চের শেষদিকে তারা ফিরে যায়।
তবে এভাবে অতিথি পাখি শিকার হতে থাকলে, একদিন অতিথি পাখি আমাদের দেশে আসা বন্ধ হয়ে যাবে। প্রকৃতির সৌন্দর্যও একদিন হারিয়ে যাবে। এ বিষয়ে সচেতন হয়ে পাখি শিকার বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।